প্রতীকী ছবি।
‘ই-লার্নিং’ মাধ্যমে যোগ দিতে পারছে না জেলার অন্তত এক চতুর্থাংশ পড়ুয়া। এই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি, শিক্ষকদের একটি বড় অংশ যারা এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত, তারাও ঠিকমতো পড়াশোনা শিখছে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আশঙ্কার প্রথম কারণ হিসেবে শিক্ষকদের একাংশ পরীক্ষা ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গটি বলছেন। তাঁরা জানান, অন্য বার এত দিনে দ্বিতীয় ‘ইউনিট টেস্ট’-এর প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে পরপর পরীক্ষা থাকায় পড়ুয়ারা পড়াশোনার মধ্যে থাকে। কিন্তু এ বার গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় পড়ুয়াদের প্রস্তুতি কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। সেটা পূরণ না করা গেলে, সমস্যা বাড়বে। পরীক্ষায় অনিশ্চয়তার কারণে পড়ুয়ারা পড়াশোনাটা কতটা ভাল ভাবে করছে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’’
দ্বিতীয়ত, ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থায় কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষয় অনুযায়ী, ‘হোয়াটস অ্যাপ’ বা অন্য সফটওয়্যারে ‘গ্রুপ’ তৈরি করে পড়ুয়াদের সেখানে ‘অ্যাড’ করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ‘ভিডিয়ো’ ও ‘অডিয়ো’ কল করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাণ্ডবেশ্বর ও লাউদোহার দু’টি স্কুলের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, ‘গ্রুপ-এ থাকলেও অনেক সময়ে বেশ কিছু পড়ুয়া ক্লাসে যোগ দিচ্ছে না। আবার, বিশেষত, ভূগোল ও বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে, যেখানে ছবি, ম্যাপ বোঝানো দরকার, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা ‘ভিডিয়ো’ করে গ্রুপে ‘পোস্ট’ করছেন। পরে, পড়ুয়াদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয় বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু বারাবনি, কাঁকসার কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, এমনও হচ্ছে যে ৫০-৬০ জন পড়ুয়ার ক্লাসের মধ্যে বড় জোর ১৫-২০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। অতএব, বোঝা যাচ্ছে, পড়ুয়াদের বড় অংশ পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছে।
পাশাপাশি, শিক্ষকেরাও কিছু সমস্যায় পড়ছেন। একটি হাইস্কুলের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু কোনার বলেন, “ক্লাসঘরে প্রতিটি পড়ুয়া কতটা শিখছে, সে দিকে নজর থাকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এ ক্ষেত্রে ফোনে পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও, ক্লাসঘরের পরিবেশ তৈরি করা কার্যত অসম্ভব।”
সমস্যার কথা শুনিয়েছে পড়ুয়ারাও। দুর্গাপুর, আসানসোলের কয়েকজন পড়ুয়া বলে, “স্কুলে কোথাও কিছু আটকে গেলে স্যর-ম্যাডামদের জিজ্ঞাসা করি। এ ক্ষেত্রে নানা কারণে তা করা যাচ্ছে না।”
পড়ুয়ারা কী শিখছে, তা জানতে পরীক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই, মনে করছেন তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রস্তাব, ‘‘সিলেবাস কমিয়ে একটিই পরীক্ষা নেওয়া বা শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া, যে ভাবেই হোক পরীক্ষা নিতেই হবে। তা হলেই বোঝা যাবে, পড়ুয়ারা কতটা শিখল। তার পরেই, কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা দেখে সমাধান করা যাবে।’’
পাশাপাশি, জেলার যে প্রায় ২৫ শতাংশ পড়ুয়া এই ব্যবস্থার সঙ্গেই যুক্ত নয়, তাদের এই মুহূর্তে পড়াশোনার সঙ্গে কতটা সম্পর্ক রয়েছে, তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষকেরা। যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অজয় পাল বলেন, “সমীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, অনলাইন ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ পড়ুয়া। তাদের জন্য স্কুল স্তরে পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এলাকায় পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে সাহায্য করবেন। অনেক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইতিমধ্যেই চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy