Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Asansol

Asansol: ছেলের খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষীই দিলেন না সেই ইমাম! বললেন শান্তি থাকুক আসানসোলে

ইমাম বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা সবাই বেকসুর খালাস হল। সামনে আবার একটা রামনবমী। শুনছি, এ বার মিছিল হবে। আমার আবেদন, আসানসোল যেন শান্তিতে থাকে।’’

ইমাম জানালেন, তিনি নিজের চোখে ছেলের খুনিদের দেখেননি। তাই মিথ্যা সাক্ষী সাজবেন কেন!

ইমাম জানালেন, তিনি নিজের চোখে ছেলের খুনিদের দেখেননি। তাই মিথ্যা সাক্ষী সাজবেন কেন! নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ১৫:৫৮
Share: Save:

দাঙ্গার আগুনে হারিয়েছিলেন ১৬ বছরের ছেলেকে। কিন্তু প্রতিহিংসার বদলে ইমাম ইমদাদউল্লা রশিদ হাতজোড় করে অশান্ত আসানসোল বাসীকে শান্ত হওয়ার আর্তি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আর কোনও বাবাকে যেন সন্তানহারা হতে না হয়। তাঁর সেই আবেদনে শান্তি ফিরেছিল শিল্পাঞ্চলে। তার পর কেটে গিয়েছে চারটে বছর। আবারও মানবতার বার্তা দিলেন সেই ইমাম। ছেলের অপহরণ ও খুনের মামলায় আদালতে দুই ধৃতের বিরুদ্ধে সাক্ষীই দিলেন না ইমাম। আদালতকে জানালেন, তিনি তো দোষীদের নিজের চোখে দেখেননি। তাই মিথ্যা সাক্ষী সাজবেন কেন!

ইমামের এই সাক্ষ্যের পর আসানসোল আদালত বেকসুর খালাস করে দশম শ্রেণির পড়ুয়া সিবগতউল্লা, অপহরণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত পিন্টু যাদব ও বিনয় তিওয়ারিকে।

ভরা আদালতে ছেলের খুনে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাবে জেনেও সন্তানহারা বাবার এমন সাক্ষ্যে অবাক অনেকেই। আইনজীবীও বিস্মিত। যদিও নিজের অবস্থানকে ব্যতিক্রমী কিছু ভাবছেন না ইমাম। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন বলেছিলাম, আজও বলছি। যা নিজের চোখে দেখিনি, তার সাক্ষী কী ভাবে দেব!’’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের রামনবমীর দিন গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয় আসানসোলের রানীগঞ্জে। রেললাইনের পাশে খুন হন বেশ কয়েক জন। মামলা করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। দুই গোষ্ঠীরই বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হন। বহুদিন সেই মামলা চলার পর শর্তসাপেক্ষে জামিন হয় অভিযুক্তদের। ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে কেউই বলেননি যে তাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন কে বা কারা খুন করেছে।

বীরভূমের বগটুইয়ে যখন উত্তপ্ত, তখন আসানসোলের একইমাম ও তাঁর আত্মীয়স্বজন নিজের ছেলের খুন হওয়ার পরেও আদালতে জানালেন, তাঁরা সত্যিই দেখেননি তাঁদের ছেলেকে কে বা কারা খুন করেছে। এর পর অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেন অতিরিক্ত জেলা বিচারক শরণ্যা সেন প্রসাদ।

অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর কথায়, ‘‘মামলায় অন্যতম সাক্ষী নিহতের বাবা ইমদাদউল্লা রশিদি আদালতে জানান, তিনি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে খুন করতে দেখেননি তাই তিনি সাক্ষ্য কী করে দেবেন। তিনি ছাড়া যাঁরা সাক্ষী হিসেবে ছিলেন, তাঁরাও জানিয়ে দেন এঁদের কাউকে খুন করতে দেখেননি।’’

মামলার সহকারী প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার ৭১ বছর বয়স হল। আমি ৪৮ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি। একজন খুন হওয়া পুত্রের পিতা সাক্ষী দিলেন না, কারণ তিনি নিজের চোখে কিছু দেখেননি। এটা আমার কাছে নজিরবিহীন ঘটনা।’’

শুক্রবার রায়ের পর পুত্রহারা সেই ইমামের কথায়, ‘‘আমি সেদিনও যে কথা বলেছি আজও সেটাই বলছি। উপরওয়ালা প্রকৃত বিচার করবেন। পুলিশ মামলা সাজিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের দায়িত্ব তারা প্রকৃত খুনি ধরবে। আমি যে হেতু নিজের চোখে কাউকে আমার ছেলেকে অপহরণ করতে বা খুন করতে দেখেনি, স্বাভাবিক ভাবেই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারব না বলেই সাক্ষী দিইনি। চিরকাল আমি সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছি। একজন ইমাম হিসেবে সত্যকে নিয়েই বাঁচতে চাই। আমি নিজে কারও নাম দিইনি। যারা গ্রেফতার হয়েছিল, এক সময় তাদের পরিবারের কেউ কেউ আমার কাছে আসার পর আমি বলেছিলাম আমি যা চোখে দেখিনি, তা বলব না। আর ওরা যদি পাপ না করে থাকে, তা হলে ওরা মুক্তি পাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা সবাই বেকসুর খালাস হল। সামনে আবার একটা রামনবমী। দু’বছর পর রামনবমীর মিছিল হবে বলে শুনছি। আমার একটাই অনুরোধ, আসানসোল যেন শান্তিতে থাকে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol Imam West Burdwan West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy