কাজে ব্যস্ত রুকসানা। জামুড়িয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
ছোট থেকে বাবাকে দেখতেন গাড়ির চাকা সারাতে। তাঁর কাছে শিখে নিয়েছিলেন কিছু কাজ। বছর পনেরো বয়সে যে দিন বাবা মারা গেলেন, সংসার চালাতে সে দিন থেকে চাকার কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে মারা যান স্বামী। তার পরে আবার ফিরেছেন সেই চাকা সারানোর কাজে। ছোট থেকে বড়, নানা গাড়ির চাকা-সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সারিয়েই সংসারের চাকা গড়াচ্ছেন জামুড়িয়ার রুকসানা শেখ।
আট ছেলেমেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল রুকসানার বাবা তাজামুল্লা হোসেনের। ভাইবোনেদের মধ্যে রুকসানা মেজো। তিনি জানান, দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে বারো বছর বয়স থেকে বাবার কাছে কিছু কাজ শিখতে শুরু করেন তিনি। বছর তিনেক পরে মৃত্যু হয় বাবার। রুকসানা বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পরেই মা আমাকে বলেছিলেন, অভাবের সংসারে তোকেই বাবার কাজ করতে হবে। তা না হলে সংসার চলবে কী ভাবে! বাবার দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়ার আগেই এক মিনিবাসের চালক চাকা সারাতে দোকানে আসেন। আমি তা সারিয়ে দিয়েছিলাম।”
সেই যাত্রা শুরু। রুকসানা জানান, গাড়ির যন্ত্রাংশ সারানোর কাজ করে তিনি পাঁচ ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন। তার পরে তাঁর বিয়ে হয় বিহারে। কিন্তু কয়েক বছর পরেই আবার নেমে আসে অন্ধকার। মৃত্যু হয় স্বামীর। শিশুসন্তানকে নিয়ে আবার জামুড়িয়ায় ফিরে আসেন তিনি। খুলে বসেন পুরনো দোকান।
জামুড়িয়া বাজার কালীমন্দির লাগোয়া এলাকায় রাস্তার ধারে ছোট দোকানে বসেই কাজ করেন বছর পঞ্চান্নর রুকসানা। তিনি জানান, মোটরবাইক, বাস, ট্রাক থেকে মাটি কাটার যন্ত্রের চাকা-সহ নানা যন্ত্রাংশ সারাতে পারেন। রুকসানার ছেলে ইমরান শেখ জামুড়িয়ার একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, “মায়ের পরিশ্রম আমাদের পরিবারের কাছে অমূল্য।” তাঁর এক ভাই আলম শেখ মিনিবাসের কনডাক্টরের কাজ করেন ও আর এক ভাই আফতাব শেখ টোটো চালান। তাঁরা বলেন, “বাবার মৃত্যুর পরে মেজোদিদি সংসারের হাল না ধরলে কী হত ভাবতে পারি না!”
হিজলগড়া গ্রামের মীর কারিবুল, জামুড়িয়া হাটতলার বিশ্বনাথ যাদব, পরিহারপুরের শেখ কাইয়ুমেরা জানান, মোটরবাইকে সমস্যা হলেই তাঁরা রুকসানার কাছে পৌঁছে যান। খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে দেন তিনি। কারিবুল বলেন, “ছোট থেকে ওঁকে দেখছি। যে ভাবে পরিশ্রম করেন, তা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে।” জামুড়িয়ার এক মসজিদের ইমাম আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ‘‘এখন সেলাই, রূপচর্চা থেকে কম্পিউটার, নানা কাজ শিখছেন মেয়েরা। তবে রুকসানা যে ভাবে বাবার কাছে কাজ শিখে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন, তা কুর্ণিশ জানানোর মতো। আমরা চাই, সরকার ওঁর পাশে দাঁড়াক।’’
রুকসানা বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে তখনকার জামুড়িয়া পুরসভা আমাকে মসজিদমহল্লায় বাড়ি তৈরি করতে দু’লক্ষ টাকা সহয়তা করেছিল। আমি নিজে আরও ২৯ হাজার টাকা খরচ করেছি বাড়ি তৈরিতে। বাস, ট্রাকের চাকা সারাতে জানলেও স্বল্প পরিসরের গ্যারাজে সেই রকম কাজ কম পাই। যদি কোনও পরিবহণ ডিপোয় আমাকে কাজের সুযোগ দেওয়া হলে সুবিধে হয়।”
আসানসোলের ১ নম্বর বরো চেয়ারম্যান শেখ শানদার বলেন, ‘‘ওঁকে বহু দিন দেখছি কাজ করতে। কোনও সাহায্যের জন্য যদি তিনি আবেদন করেন তবে নিশ্চয় দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy