বন্ধ পড়ে কাঁকসার দোমড়ার চালকল। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত হলেও জেলার বহু মানুষ কৃষির উপরে নির্ভরশীল। ধানের পাশাপাশি সর্ষে-সহ বিভিন্ন ধরনের ডালশস্যের চাষও হয় জেলার বিভিন্ন ব্লকে। তবে মূল উৎপাদিত ফসল হয় ধান। তার উপর নির্ভর করে জেলায় বেশ কয়েকটি চালকলও তৈরি হয়েছে। তবে ‘লকডাউন’-এর সময়ে চালকল চালু রাখার কথা বলা হলেও, ধানের অভাবে বেশিদিন তা চালু রাখা যাবে না বলে আশঙ্কা মালিকদের। জেলা চালকল সংগঠনের দাবি, প্রশাসনের তরফে কৃষক বাজারে ফের ধান কেনা শুরু করলে সমস্যা মিটবে।
জেলার কাঁকসা, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, সালানপুরের মতো ব্লকের বহু মানুষ কৃষিনির্ভর। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে বর্ষার সময়ে আমন ধানের চাষ হয় প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আর একমাত্র কাঁকসা এলাকায় সেচের জল মেলায় বোরো ধান চাষ করা যায় সেখানে। কাজেই বর্ষার ধান চাষই জেলায় প্রধান চাষ বলা যেতে পারে। ধানের উপরে নির্ভর করে জেলায় রয়েছে সাতটি চালকল। তার মধ্যে কাঁকসায় রয়েছে চারটি। দুর্গাপুর-ফরিদপুর, জামুড়িয়া ও আসানসোলে রয়েছে একটি করে চালকল।
জেলা ‘রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সাতটি চালকলের মধ্যে আসানসোলের চালকল সরকারের কাছ থেকে ধান কেনায় যোগ দেয়নি। আর কাঁকসার দোমড়ার একটি চালকল এখনও সরকারের কাছ থেকে ধান কেনার অনুমতি পায়নি। কাজেই পাঁচটি চালকল এখন সরকারের কাছ থেকে ধান কিনে চাল উৎপাদন করছে। কিন্তু করোনার জন্য মার্চ মাস থেকে কৃষক বাজারগুলিতে ধান কেনার শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধান দেওয়া বন্ধ আছে চালকলগুলিতেও।
অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জেলায় এ বছর ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৫০ হাজার টন। ইতিমধ্যে ২৬ হাজার টন ধান কেনাও হয়ে গিয়েছে। সে ধান চালকলগুলিতে সরবরাহ করা হয়ে গিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য জানান, জেলায় এমনিতেই চালকলের সংখ্যা কম। চালকলগুলিতে যে পরিমাণ ধান সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছিল, তার বেশির ভাগই চাল করে খাদ্য দফতরে পাঠানো হয়ে গিয়েছে।
তার পরে? গৌতমবাবু বলেন, ‘‘রেশনে যে চাল দেওয়া হচ্ছে তার বেশির ভাগই আনা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান থেকে। ইতিমধ্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য শিবির করা না হলে, ভবিষ্যতে চালকলগুলিও চরম সমস্যায় পড়বে।’’ তাঁর দাবি, সরকার যদি ফের চাষিদের কাছ থেকে চাল কেনা শুরু করে, তা হলে উভয় পক্ষই উপকৃত হবে। করোনার যা বিধিনিষেধ আছে তা মেনেই কাজ করা হবে বলে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ামক সুজিত হালদার বলেন, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। নির্দেশ মতো কাজ করা হবে।’’
জেলায় ধানের পাশাপাশি, সর্ষে, সূর্যমুখী ফুল, তিল চাষও হয়ে থাকে। এর মধ্যে সূর্যমুখী চাষ খুব বেশি হয় না। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জেলায় সর্ষে চাষ হয়েছিল প্রায় ২,৫০০ হেক্টর জমিতে। তিল চাষ হয়েছে প্রায় ১,০০০ হেক্টর জমিতে। সূর্যমুখী হয়েছে ১০০ হেক্টরের মতো। জেলার রানিগঞ্জে ১০টির মতো তেলকল রয়েছে। যেখানেই সর্ষে ও তিল থেকে তেল তৈরি করা হয়। জেলায় সূর্যমুখীর জন্য কোনও তেলকল নেই। যে সামান্য সূর্যমুখী চাষ হয় তা রানিগঞ্জের তেলকলে নিয়ে যান চাযিরা। বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রানিগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়া বলেন, ‘‘কাঁচামাল আসছে। আপাতত মিলগুলি ঠিক চলছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy