ভাতার ব্লক অফিসে তখনও ফর্ম জমা নেওয়া চলছে। নিজস্ব চিত্র
কাজ হারানো শ্রমিক বা দিনমজুরদের জন্য ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্প চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু যথাযথ রূপরেখা সমেত সরকারি নির্দেশিকা না আসায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি, দাবি পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের। তবে কালনা, কাটোয়ার মতো কিছু জায়গায় ফর্ম আগেই বিলি হয়ে যাওয়ায়, সোমবার তা জমা দিতে ভিড় করেছিলেন মানুষজন। সকাল থেকে লাইন পড়ে। পরে ফর্ম জমা নেওয়া হবে না জানানোয় বিক্ষোভও হয় কিছু জায়গায়।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, জমায়েত, দূরত্ব না মানার ঘটনা এড়াতেই হাতে হাতে ফর্ম জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “প্রচেষ্টা প্রকল্পের আবেদনকারীদের বিচারের মাপকাঠি কি ভাবে নির্ধারিত হবে, তার নির্দেশ এখনও আসেনি। সে জন্য প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ রয়েছে।’’
রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অন্য কোনও সামাজিক প্রকল্পে ভাতা পান না, ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে আটকে গিয়েছেন এমন শ্রমিকরাই আবেদন করতেন পারবেন এই প্রকল্পে। এককালীন এক হাজার টাকা দেওয়া হবে তাঁদের। শনিবার থেকেই ফর্ম তোলার ভিড় দেখা যায় কালনা মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে। এ দিন ওই ফর্ম জমা দিতে ভিড় জমে। মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে গলির মধ্যে একটি কাউন্টার থেকে ফর্ম জমা নেওয়া শুরু হয়। বেলা ১২টা নাগাদ মহকুমাশাসক সুমনসৌরভ মোহান্তি জানান, আর ফর্ম জমা নেওয়া হবে না। ক্ষোভ ফেটে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। কালনার এক মহিলার দাবি, ‘‘ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। ছোট্ট একটা দোকান থাকলেও লকডাউনের পর থেকে তা বন্ধ। ভেবেছিলাম, টাকাটা পেলে একটু সুরাহা হবে। কিন্তু ফর্মই জমা নেওয়া হল না। জানি না কী হবে!’’ যদিও প্রশাসনের দাবি, লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছিল না।
কাটোয়াতেও গত কয়েকদিন ধরেই ফর্ম তোলা, জমা নেওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কিছু কাউন্সিলর ও তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে ফর্ম মিলেছে। ফর্ম ফটো-কপি করেও একাধিক জনকে পূরণ করতে দেখা যায়। এমনকি, সোমবার পুরসভায় ফর্ম জমা নেওয়া হবে রটে যাওয়ায় ভিড়ও জমে সকাল থেকে। পরে অবশ্য পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, পুরোটাই গুজব। তিনি বলেন, ‘‘সরকার এখনও ফর্ম ছাড়েনি। প্রথমে ঠিক ছিল, পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি বিষয়টা দেখবে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদল করে শ্রম দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।’’ কাটোয়া মহকুমা শ্রম দফতরের নূন্যতম মজুরি পরিদর্শক প্রবীরকুমার ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, যে ‘প্রচেষ্টার’ ফর্ম এসডিও, ব্লক অফিস থেকে দেওয়া হবে। সেখানেই জমা দিতে হবে। আমাদের দফতর থেকে শুধু অনুমোদিত উপভোক্তাদের অর্থ দেওয়া হবে।’’
এ দিকে, শুরুর আগেই প্রকল্প বন্ধ হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে। সিটুর জেলা সভাপতি তথা সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার পরেও প্রকল্প বন্ধ! দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ব্লক অফিসে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’’ বিজেপি নেতা অনিল দত্ত সোশ্যাল মিডিয়া’য় লিখেছেন, ‘প্রচেষ্টা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কোথাও ফর্ম নিচ্ছে, তো কোথাও ফর্ম জমা নিচ্ছে না। অথচ তৃণমূলের নেতারা পাড়ায়-পাড়ায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন।’ জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্তের জবাব, “লকডাউনে সবাই বাড়িতে রয়েছেন। সেখানে বিজেপির অভিযোগ সম্পূর্ণ হাস্যকর।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, যাঁরা ফর্ম নিতে এসেছেন, তাঁদের ফর্ম দেওয়ার জন্য জেলাশাসক মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আজ, মঙ্গলবার থেকে ফর্ম জমা নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ফর্ম জমা নেওয়া হয়েছে এমন আবেদনগুলিকে অনলাইন পূরণ করতে বলেছেন জেলাশাসক।
এর সঙ্গেই ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য করতে ‘স্নেহের পরশ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ওই শ্রমিকদের আবেদন করতে হচ্ছে সেখানে। কিন্তু বাড়িতে বসে ফর্ম পূরণ করার ফলে আবেদনের এক তৃতীয়াংশ বাতিল হয়ে গিয়েছে, দাবি প্রশাসনের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে পূর্ব বর্ধমানে ২২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৮,২০০টি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, আবেদনগুলি পরীক্ষা করার সময় কে, কোন জায়গা থেকে আবেদন করছেন তা জানার উপায় রয়েছে প্রশাসনের কাছে। সে সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পেরেছে, আবেদনকারীরা জেলায় ফিরে এসেছেন। সে কারণেই ফর্ম বাতিল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy