সাতপাক: তাহসিন ও সুনীল। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই ওরা কেউ আলপনা দিতে ব্যস্ত, কেউ দশকর্মা সামগ্রী গুছোতে। দুপুর গড়ালেই যে বাজবে সানাই!
হোমের রেখা, তাপসীদের কাছে এ দিনটা ছিল একেবারে অন্যরকম। তাঁদের বোনের বিয়ে যে। বুধবার কাটোয়ার মালঞ্চ গ্রামের একটি হোম থেকে ধর্মের বাধা পেরিয়ে এভাবেই বিয়ে হল অনাথ তাহসিনা খাতুনের। সামাজিক বিয়ের সঙ্গে, আইন মোতাবেকও বছর তিরিশের ওই যুবতীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন পাঁজোয়া গ্রামের সুনীল দাস।
বছর চব্বিশ ধরে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ দফতরের তত্ত্বাবধানে ‘ইনস্টিটিউট ফর মোটিভেটিং সেল্ফ-এমপ্লয়মেন্ট’ নামে এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধীনে ‘পিতৃআলয় সদরগৃহ’ হোমটি চলছে। আড়াই বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগণার সোনারপুরের একটি হোম থেকে এখানে আসেন তাহসিনা। তিনি বলেন, ‘‘খুব স্পষ্ট মনে নেই, তবে সোনারপুরের হোমের কর্মীদের কাছে শুনেছি, পাঁচ বছর বয়সে মালদা স্টেশনের প্লাটফর্মে আমায় খুঁজে পায় পুলিশ। প্রথমে মালদা, তারপর সোনারপুরের হোম পেরিয়ে এখানে আসি।’’ স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ না পেলেও রাখি তৈরি থেকে কাঁথা স্টিচ, সবেতেই জুড়ি মেলা ভার তাহসিনার। আর পাঁচটা মেয়ের মতো সংসারের স্বপ্ন দেকতে সেও। হোম কর্তৃপক্ষ সে কথা জানার পরে খোঁজ শুরু করেন।
হোমের কর্মী ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী জানান, স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে হোম সংলগ্ন দেয়াসিনের বাড়িতে মাঝেমাঝে আসতেন বছর পঁয়তাল্লিশের সুনীলবাবু। ফের বিয়ের ইচ্ছা নিয়ে হোমে যোগাযোগ করেন তিনি। পাত্রপাত্রীর একে অপরকে পছন্দ হয়। হোমের কর্মীরা গিয়ে পাত্রের পাঁজোয়ার বাড়ি, জমি-জায়গাও দেখে আসেন। তারপরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়ে বিয়ের দিন ঠিক হয়। মঙ্গলবার কাটোয়ায় রেজিস্ট্রি বিয়ের পরে হোমে গিয়ে শুভদৃষ্টি হয় বর-কনের। মালাবদল, সিঁদুরদানের পরে ভাত, ডাল, পোস্ত, মাছের কালিয়ায় বিয়ের ভোজ সারেন জনা ষাটের আবাসিক, কর্মী।
তাহসিনা বলেন, ‘‘মা-বাবাকে তো কাছে পাইনি, এ বার স্বামী-সংসার পেলাম।’’ আর সুনীল বাবুর কথায়, ‘‘অনাথ, ভিন ধর্ম কখনও সম্পর্কে বাধা হয়নি। প্রথম দেখাতেই ওকে পছন্দ হয়েছিল।’’ হোমের সুপার উমা মাইতি বলেন, ‘‘আগেও বেশ কয়েকটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তারা সুখে সংসার করছে। ওদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy