জমি-জটে আটকে গেল গলসি ১ ব্লকের পারাজ পঞ্চায়েতের জলপ্রকল্পের কাজ। প্রশাসনের দাবি, শনিবার কাজে বাধা দেন প্রকল্পের পাম্পহাউস নির্মাণের জন্য চিহ্নিত জমির ‘দখলদারেরা’।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই পঞ্চায়েতের সাত-আটটি গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। প্রকল্পের মূল জমি চিহ্নিত হয়েছে জাগুলিপাড়া মৌজায়। রানাডিহি মৌজায় ৭৪ দাগের জমিতে পাম্প হাউস গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, ওই জমিটি আদতে খাস। গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা সেটি ‘দখল’ করে চাষবাস করেন। বছরে দু’বার আমন ও বোর ধান চাষ হয় সেখানে। সেই জমিরই একাংশে পাম্প হাউস নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। এ দিন যন্ত্রপাতি ও ট্রাক্টর নিয়ে জমিতে কাজে গিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। বিকল্প কোনও জমিতে পাম্প হাউস নির্মাণের দাবি তুলে তাঁদের কাজে বাধা দেন ‘দখলদারেরা’।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, যাঁদের ‘দখলদার’ বলা হচ্ছে তাঁরা বহু বছর ধরে জমিতে চাষবাস করছেন। আগেও তাঁরা বিকল্প জমিতে পাম্প হাউস নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন প্রশাসনের কাছে। ওই সব ‘দখলদারদের’ মধ্যে শেখ সিরাজুল, সোমেদ আলি মণ্ডল, হীরা বাগদি, মিসবাহার বেগমের বক্তব্য, ‘‘আমরা ৪০ বছর ধরে ওই জমিতে চাষ করছি। বছরে দু’বার ধান চাষ হয়। এ বার বোর ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। জমি কেড়ে নিলে খাব কী? যেখানে চাষ হয় না, এমন কোনও জমিতে প্রকল্প গড়া হোক।’’ তাঁদের দাবি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন।
পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ মিরাজুল বলেন, “জমি নিয়ে কিছু অভিযোগ রয়েছে। ব্লক স্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমির দখলদারদের নোটিস ধরিয়ে ব্লকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এসেছিলেন। তখন প্রকল্প গড়ার অনুমোদন দিয়েছিলেন। কাজের সময়ে হঠাৎ কেন বাধা দিচ্ছেন বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েতে এলাকায় জলপ্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল আগেই। তার পরেই জমি চিহ্নিতকরণ-সহ যাবতীয় কাজ শুরু করেছিল
ব্লক প্রশাসন।
মাস কয়েক আগে একই ভাবে সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি ছাড়তে অস্বীকার করেছিলেন লোয়া-কৃষ্ণরামপুর পঞ্চায়েতের বেতালবোনের কয়েক জন ‘দখলদার’। প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা
করে সমস্যা মেটায়। পারাজেও এ ভাবেই সমাধানসূত্র বেরোবে বলে মনে করছে ব্লক প্রশাসন। বিডিও (গলসি ১) জয়প্রকাশ মণ্ডল বলেন, “জলপ্রকল্পের জমি নিয়ে একটি
সমস্যা হয়েছে। দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)