কেন্দা গ্রাম লাগোয়া এলাকায় পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় পরিবেশ আদালত রায় ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে কেন্দা গ্রাম লাগোয়া এলাকায় পানীয় জলের সমস্যার সমাধান, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ‘কেন্দা গ্রাম রক্ষা কমিটি’র অভিযোগ, আদালতের নির্দেশের পরে তিন মাস কেটে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন এবং ইসিএল-এর বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ করেছে কমিটি। একই ক্ষোভ এলাকাবাসীর একাংশের।
কমিটি জানায়, পরিবেশ আদালতের দিল্লি বেঞ্চের বিচারপতি এসপি ওয়াংডির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১৯-এর ৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করে জানায়, ৩০ দিনের মধ্যে পানীয় জলের সমস্যা সমাধান, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করতে হবে ইসিএল-কে। পাশাপাশি, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদকে (এডিডিএ) শুরু করতে হবে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া। কমিটি জানায়, পানীয় জলের কাজটি জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) তত্ত্বাবধানে করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির তত্ত্বাবধানে থাকবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
কিন্তু ওই রায়ের পরেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ কমিটির বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের। তাঁরা অভিযোগ করেন, কেন্দা গ্রামে জলের অন্যতম ভরসা পুকুর। অথচ, ইতিমধ্যেই ৩২টি পুকুর থেকে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে জল তুলে কয়লা কেটেছে ইসিএলের নিউকেন্দা খোলামুখ খনি। গ্রাম থেকে একশো মিটার দূরে খনি রয়েছে। ফলে, এলাকার জলস্তর অনেকটাই নেমেছে। শীতের শুরু থেকে জল প্রায় মেলেই না। গ্রীষ্মে পানীয় জলের সমস্যা চরম আকার নেয়।
পাশাপাশি, রায়ের পরে তিন মাস কাটলেও দূষণ সমস্যারও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ কমিটির সদস্য স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, কয়লার গুঁড়ো মিশে জল-দূষণ, গাছ কাটার পরে বৃক্ষরোপণ না হওয়ার মতো বিষয়গুলির কোনও সমাধান এ যাবৎ হয়নি।
২০১৬-য় পুনর্বাসন, জমির দামের পুনর্মূল্যায়ন-সহ নানা দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জেলা সভাপতি অনল মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরিবেশ আদালতে ইসিএল জানিয়েছিল, তারা দশ হাজার গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার এবং জল সরবরাহের জন্য আটশো মিটার পাইপলাইন বসিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও কাজই হয়নি।’’
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দা গ্রাম লাগোয়া খনি এলাকা পরিদর্শনে যান জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহাশ্বেতা বিশ্বাস, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মহকুমা আধিকারিক (আসানসোল) অঞ্জন ফৌজদার-সহ প্রশাসনের কর্তারা। রায়ের তিন মাস পরে কেন পরিদর্শন, সে প্রশ্ন তুলেছেন বরুণবাবু, অনলবাবুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আগেও এক বার জেলা প্রশাসন এলাকায় এসেছিল। কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ, আদালতের নির্দেশে কাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।’’
এলাকাবাসীর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মহাশ্বেতাদেবী কিছু বলেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে এলাকায় এসেছি। বিস্তারিত বিষয়টি ইসিএল-কে জানানো হবে।’’ অঞ্জনবাবুও জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে, তা ইসিএল-কে জানানো হবে। কিন্তু রায়ের পরে তিন মাস কেটে গেলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ার জন্য জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠিকে ফোন করা হলে তিনি উত্তর দেননি। জবাব মেলেনি এসএমএস এবং হোয়াটস অ্যাপ বার্তারও। তবে ইসিএল-এর সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশ দেখে পদক্ষেপ করা হবে!’’
পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy