Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Panchayat Chief

প্রধানের স্বামীই পঞ্চায়েতের ‘তদারক’

টেবিলের উল্টো দিকে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন, নথিপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। তাঁর পাশে নির্লিপ্ত ভাবে বসে এক মহিলা।

প্রধানের পাশে বসে কাজ দেখছেন স্বামী। ছড়িয়েছে এই ছবি।

প্রধানের পাশে বসে কাজ দেখছেন স্বামী। ছড়িয়েছে এই ছবি। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্তখণ্ডঘোষ
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

টেবিলের উল্টো দিকে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন, নথিপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। তাঁর পাশে নির্লিপ্ত ভাবে বসে এক মহিলা। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের ওই ছবি (আনন্দবাজার সেটির সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হইচই শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই মহিলা, শিউলি খাঁ পঞ্চায়েত প্রধান। আর ছবিতে তাঁর পাশে বসে যাঁকে পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধান করতে দেখা যাচ্ছে, তিনি প্রধানের স্বামী প্রসেনজিৎ খাঁ। সমাজমাধ্যমে একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের চেকের ছবিও ছড়িয়েছে (আনন্দবাজার সেটিরও সত্যতা যাচাই করেনি)। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রসেনজিতের নামে চেক দিয়েছেন পঞ্চায়েতেরই প্রধান! গোটা বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বেধেছে খণ্ডঘোষে।

এই পঞ্চায়েতেরই উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের বাড়ির চার জনের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় থাকা নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়েছিল। এখন আবার সেখানকার প্রধানের স্বামীর ‘কার্যকলাপ’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই ছবি সামনে আসতেই বিরোধীরাও সরব হয়েছে। তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লক নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা প্রধানকে সতর্ক করেছেন। উপপ্রধানের অভিযোগ, “স্বামী-স্ত্রীর কার্যকলাপের জন্য দলের বদনাম হচ্ছে। তাই আমি দু’বছর ধরে পঞ্চায়েতে যাচ্ছি না।’’ প্রধানের অবশ্য পাল্টা দাবি, উপপ্রধান খেয়ালখুশি চলেন। ব্যক্তিগত কারণে তিনি পঞ্চায়েতে আসেন না।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, পঞ্চায়েতের ভিতর প্রধানের স্বামীর ‘তদারকির’ অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। প্রতিদিন সকালে কামারপুর গ্রাম থেকে মোটরবাইকে দইচাঁদা গ্রামে পঞ্চায়েত অফিসে আসেন ওই দম্পত্তি। বিকেল পর্যন্ত প্রধানের পাশে একটি চেয়ারে বসে থাকেন তাঁর স্বামী। পঞ্চায়েতের কাজকর্মে আসা লোকজনের সঙ্গে তিনিই কথা বলেন। স্থানীয় বাসিন্দা স্নিগ্ধা দাসের দাবি, “কলেজে ভর্তির জন্য আয় শংসাপত্রের প্রয়োজন ছিল। পঞ্চায়েতে গিয়ে প্রধানের স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে হল। তাঁর নির্দেশের পরে শংসাপত্র মিলল।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা জানান দিলবাহারাম শেখ। তাঁর কথায়, “জমি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে প্রধানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি পাশে স্বামীর দিকে ঠেলে দিলেন।’’

প্রধানের স্বামী প্রসেনজিতের যদিও বক্তব্য, “আমি পঞ্চায়েতের নীচের তলায় বসে থাকি। পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ করি না।’’ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “প্রধান ডাকলে তবেই যাই। তখনই হয়তো কেউ ছবিটি তুলেছে।’’ চেকের বিষয়ে তাঁর দাবি, “আমরা সাদামাটা মানুষ। যাতায়াতের খরচ বাবদ সেই সময়ে এক আধিকারিক আমার নামে চেকটি দিয়েছিলেন। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি।’’ ওই চেকের ছবিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে স্বামীকে পাঁচ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছে প্রধান। তাঁর দাবি, “আমরা কার্যত একঘরে ছিলাম। সে অবস্থায় ভোটে জিতে প্রধান হই। আমাকে বাড়ি থেকে একা ছাড়তে চাইত না। তাই স্বামী পঞ্চায়েতে আনা-নেওয়া করেন। যাতায়াত খরচ বাবদ আমার পাওনা ভুল করে স্বামীর নামে চেক দেওয়া হয়েছিল।’’

বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র, সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষদের অভিযোগ, “মহিলা প্রধানদের ক্ষমতা স্বামীরাই কুক্ষিগত করে নিয়েছে। তাঁদের নির্দেশেই পঞ্চায়েত পরিচালনা হয়। এই ঘটনা তাঁরই প্রমাণ।’’ খণ্ডঘোষের ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলামের প্রতিক্রিয়া, “এ সব ছবি দলকে বদনামের মুখে ফেলছে। আমরা প্রধানকেসতর্ক করেছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy