Advertisement
E-Paper

‘সেই সাপ জ্যান্ত’, কেউটের মাথায় দুধ-গঙ্গাজল ঢেলে পূর্ব বর্ধমানের চার গ্রামে পুজো, ছোবল প্রসাদ!

ঝাঁকলাই আদপে জাত কেউটে। তীব্র বিষ এর। সেই বিষধর সাপের সঙ্গে যুগের পর যুগ ধরে সহাবস্থান করে আসছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এটা সাপ নয়, সাক্ষাৎ দেবী মনসা।

Snakes

চলছে কেউটের পুজো। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৭
Share
Save

এক হাতে লেজটা ধরা। অন্য এক হাতে ছোট্ট একটি লাঠি। পুরোহিতের সেই লাঠিতে জড়িয়ে রয়েছে বিশাল একটি কেউটে। মাঝেমধ্যে ফণা তুলছে। মন্দিরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর এক পুরোহিত তখন মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে সেই কেউটের মাথায় দুধ, গঙ্গাজল ঢালছেন। নিজের হাতে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছেন ফণাধারী কেউটের মাথায়। সোমবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের পলসোনা গ্রামে এ ভাবেই জ্যান্ত কেউটেকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হল। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, এটাই তাদের রীতি। তবে এই কেউটে একটু স্বতন্ত্র। যা পূর্ব বর্ধমান জেলার চার-পাঁচটি গ্রাম ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। গ্রামবাসীদের কাছে এই বিশেষ ধরনের কেউটে ঝঙ্কেশ্বরী বা ঝাঁকলাই। তার পুজো হয় আষাঢ় মাসে।

ঝাঁকলাই আদপে জাত কেউটে । তীব্র বিষ এর। সেই বিষধর সাপের সঙ্গে যুগের পর যুগ ধরে সহাবস্থান করে আসছেন গ্রামবাসীরা। শুধু তাই নয়। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এটা সাপ নয়, সাক্ষাৎ দেবী মনসা। তিনিই গ্রামবাসীদের বিষধরের ছোবল থেকে রক্ষা করে আসছেন। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের মুশারু, পলসোনা, ছোটপশলা এবং ভাতারের বড়পোশলা গ্রামের বাসিন্দারা ‘জ্যান্ত দেবী’ হিসাবে মানেন ঝাঁকলাইকে। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু, নিগন মিলে মোট সাতটি গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়। স্থানীয়েরা জানান, এক সময় সাতটি গ্রামেই দেখা যেত ঝাঁকলাই। তবে এখন বড়পোশলা, ছোটপোশলা, মুশারু এবং পলসোনা এই চার গ্রামেই শুধু দেখা মেলে এই কেউটের। পথে-ঘাটে, গৃহস্থ বাড়ির রান্নাঘর থেকে শোওয়ার ঘর, সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ। গ্রামবাসীদের দাবি, ঝাঁকলাই বিষধর। কিন্তু তাঁদের কাউকে কামড়ায় না। আর কোনও কারণে ছোবল মারলে মন্দিরের মাটি লেপে দিলেই নাকি বিষমুক্ত হয়ে যান রোগী! এই বিশ্বাস নিয়েই ঝাঁকলাই নিয়ে ঘর করেন চার গ্রামের বাসিন্দারা।

ঝাঁকলাই নিয়ে অনেক লোককথা। ভাতারের বাসিন্দারা বলেন, ঝাঁকলাই আসলে ‘কালনাগিনী’। লখিন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করে পালানোর সময় বেহুলা কাজললতা ছুড়ে মেরেছিলেন তাকে। সেই কাজললতার আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। পূর্ব বর্ধমানের কয়েকটি গ্রামে যে ঝাঁকলাইয়ের দেখা মেলে, তাদেরও লেজ কাটা। মনসামঙ্গলে কালনাগিনী বেহুলার শাপে মর্ত্যে আসে। বাসিন্দাদের বিশ্বাস, সেই থেকেই ওই এলাকায় বসবাস করছে এই বিশেষ কেউটে। আষাঢ় মাসে ভক্তিভরে তার পুজো করেন গ্রামবাসীরা।

এই ‘উৎসব’ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী এবং সর্প বিশেষজ্ঞ ধীমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঝাঁকলাই একটি বিরল প্রজাতির সাপ। মজার বিষয় হল, গ্রামবাসীদের এই ভক্তি এবং শ্রদ্ধার জন্যই কিন্তু বিরল প্রজাতির সাপটি এখনও টিকে রয়েছে এখানে। এটা অবশ্যই এক বিরল ঘটনা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে সিঁদুরে রাসায়নিক থাকে। ঝাঁকলাইয়ের পুজোর সময় সিঁদুর মাখানো এড়িয়ে যাওয়া উচিত।’’

Snake Worship

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।