বাপির নির্মীয়মাণ বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
গ্রামে থাকলে এই দিনটা দেখতে হত না! বৃহস্পতিবার দু’টি গাড়িতে চারটি দেহ ঢুকতেই ফুঁপিয়ে উঠল গলসির বন্দুটিয়া গ্রাম। এই গ্রামেরই ছেলে বাপি মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী দোলন, মেয়ে নন্দিনী, ছেলে আবির আর শাশুড়ি সুচিত্রা মালিক বালির ট্রাক চাপা পড়ে মারা যান মঙ্গলবার গভীর রাতে। কিছু কারণে বাপি সপরিবার স্ত্রীর বাড়ি শিকারপুরে থাকছিলেন। দিন কয়েকের মধ্যে গ্রামে ফেরার কথাও ছিল তাঁদের।
গলসি থেকে গোহগ্রাম রাস্তায় সাত কিলোমিটার দূরে ইড়কোনার পাশে বন্দুটিয়া। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। রয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী, সরকারি চাকুরে। এখানকারই বাসিন্দা রামপ্রসাদ মণ্ডলের একমাত্র ছেলে বাপি। চাষাবাদ, দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। বছর তিনেক আগে বাপি সপরিবার শিকারপুরে চলে যান। এ দিন ছেলের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে রামপ্রসাদবাবু বলেন, “আমার উপর রাগ করে তুই চলে গিয়েছিলি। স্বপ্নেও ভাবিনি, এ ভাবে সবাইকে নিয়ে আসবি। সব শেষ হয়ে গেল আমার।’’
এ দিন সকাল থেকেই গ্রামের সরু রাস্তা, আশপাশের বাড়ির ছাদ, পুকুরপাড়, সর্বত্র যেন ভেঙে পড়ছিল গ্রাম। সব খানেই যেন ওই ‘শেষ হয়ে যাওয়ার’ প্রতিধ্বনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ‘‘তুই (বাপি) গ্রাম ছেড়ে না গেলে এমনটা হত না রে!’’ ত্রিপলে মোড়া দেহগুলি দেখে কারও বা আর্জি, ‘‘একবার খুলে দিন। গ্রামের মানুষগুলির মুখটা শেষ বারের মতো দেখি।’’
তবে দ্রুতই গ্রামে ফিরতে চেয়েছিলেন বাপি, জানান কাকা শিবশঙ্কর মণ্ডল ও বাপির তুতো ভাই বাবু মণ্ডল। তাঁরা জানান, গত বার পুজোর সময়ে বাড়ি এসেছিলেন বাপি। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ প্রকল্প থেকে পুরনো বাড়ির পিছনে ঘরও তৈরি করেছিলেন বাপি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের দেওয়াল গাঁথার কাজ সারা। শুধু ছাদটাই করা বাকি। শিবশঙ্করবাবু সেই ঘরে দাঁড়িয়েই শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘ওখানে শুনতাম দামোদরের জলও ঘরে ঢোকে। মাঘ মাসে গ্রামে ফিরবে বলেছিল ভাইপো। সবাই খুশি হয়েছিলাম আমরা। এখন এই ঘরে আর কে থাকবে?’’
এই শূন্যতা গ্রাস করেছে পড়শিদেরও। শেখ আব্বাস, শাম প্রামাণিকেরা বলেন, ‘‘বাপি, ওর পরিবার নেই, এটা ভাবতেই পারছি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা পোতনা-পুরষা পঞ্চায়েতের সদস্য আবসার আলি শেখ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে ২০১৮-১৯ বর্ষে ঘরের জন্য টাকা পেয়েছিলেন বাপি। ঘরও তৈরি হয়ে এসেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনা গ্রামের আমরা প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy