আউশগ্রাম থানা। —ফাইল চিত্র।
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রূপমঞ্জরির নামে। কিন্তু কে এই রূপমঞ্জরি? আউশগ্রামের এড়াল অঞ্চলের কলাইঝুটি গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকের কাছেই তাঁর সম্পর্কে ধারণা আবছা। অথচ আঠেরোশ শতকে এই গ্রামেই জন্মেছিলেন বিদূষী রূপমঞ্জরি, যিনি পরবর্তী কালে হটু বিদ্যালঙ্কার নামে পরিচিতি পান। পণ্ডিত, চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে রূপমঞ্জরির পরিচিতি ধরে রাখতে তাঁর মূর্তি তৈরি ও জন্মস্থানকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
ইতিহাস গবেষকদের থেকে জানা যায়, রাজা রামমোহন রায়ের সমসাময়িক ছিলেন তিনি। পুরুষ বেশে নিজের গ্রামে নরনারী নির্বিশেষে চিকিৎসা করেছেন, ছাত্রদের চিকিৎসা বিদ্যা দিয়েছেন। তৎকালীন মহিলারা তাঁকে দেখে ঘোমটাও দিতেন বলে শোনা যায়। কলাইঝুটি গ্রামেই বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম রূপমঞ্জরির। পণ্ডিত নারায়ণ দাস ও সুধামুখীর এক মাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। শৈশবেই মাকে হারিয়ে বাবার স্নেহছায়ায় বড় হয়েছেন। অল্প বয়সেই বাবার কাছে পড়াশোনা শেষ করে টোলে পড়ার বায়না ধরেন তিনি। সেই সময় মেয়েদের টোলে পড়ার রেওয়াজ ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত পাশের গ্রামের গোকুলানন্দ তর্কালঙ্কারের টোলে মেয়েকে ভর্তির জন্য নিয়ে যান। প্রথমে পণ্ডিত রাজি না হলেও, মেয়ের আগ্রহ দেখে তাঁকে টোলে ভর্তি করে নেন।
টোলে ছেলেদের মতো ধুতি, চাদর পরে পড়াশোনা করতেন তিনি। পায়ে থাকত খড়ম। মাথা ন্যাড়া করে টিকিও রাখতেন। এই বেশভূষাতেই আজীবন দেখা গিয়েছে তাঁকে। কৌমার্য ব্রত নিয়ে ছিলেন এই বিদূষী। টোলে দক্ষতার সঙ্গে সাহিত্য, চড়ক, সুশ্রুত, জ্যোতিষ, ন্যায়-সহ সমস্ত শাস্ত্র শিক্ষা শেষ করে স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ‘বিদ্যালঙ্কার’ উপাধি পান। পরবর্তী কালে তিনি কয়েক ক্রোশ দূরে কোটা গ্রামের কাছে একটি টোল খুলে শিক্ষাদানে ব্রতী হন। তাঁর টোলে ছাত্রদের ভিড় বাড়তে থাকে। পাশাপাশি দেশীয় পণ্ডিতেরাও শাস্ত্রীয় সমস্যায় পড়লে বা কবিরাজরা জটিল রোগের চিকিৎসার পরামর্শ নিতে তাঁর কাছে ছুটে আসতেন বলে শোনা যায়। ক্রমে তিনি সারা দেশে ‘মেয়ে পণ্ডিত’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি তর্ক সভায় যোগ দিতে শুরু করেন তিনি।
বর্তমান গ্রামের দক্ষিণ দিকে দু’টি পুকুরের মাঝে ছিল তাঁর আদি বাসস্থান। সেই বাসভবনটি এখন আর নেই। তবে দে পরিবারে রয়েছে তাঁর সমাধি, এমনই দাবি গ্রামবাসীর। দে পরিবারের দুই বধূ সীমা ও প্রভাতী বলেন, “আমরা শ্বশুরদের মুখে শুনেছি এটি রূপমঞ্জরির সমাধি। তাই নিয়মিত সেখানে ধুপ দেখাই, প্রণাম করি।” গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর সেনাপতি, রজনীকান্ত পাল, প্রদীপকুমার পাল, পবিত্র কোনারদের আক্ষেপ সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রূপমঞ্জরির পুঁথিগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁরা বলেন, “এক মাত্র গ্রামের বিদ্যালয়ের নামের মধ্যেই বেঁচে আছেন আমাদের গ্রামের এই বিদূষী। আমরা চাই এই প্রজন্ম তাঁকে চিনুক। তাঁকে নিয়ে গবেষণা হোক। তাঁর জন্মস্থানকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক।”
ইতিমধ্যেই এই দাবি নিয়ে আউশগ্রাম ২ ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। বিডিও (আউশগ্রাম ২) চিন্ময় দাস বলেন, “আবেদন পেয়েছি। আমি নিজেও ওই গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁদের দাবি, রূপমঞ্জরির একটি মূর্তি গ্রামে বসানো হোক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy