Advertisement
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Corona

অক্সিজেন পৌঁছচ্ছেন কোভিড-জয়ী দুই বোন

রিমা দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তথ্যপ্রযুক্তির স্নাতক। রিয়া বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক।

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির রিমা ও রিয়া। ছবি: পাপন চৌধুরী

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির রিমা ও রিয়া। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
ডিসেরগড় শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:৩৫
Share: Save:

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করতে মাথার ঘাম পায়ে পড়েছিল তাঁদের। সেই যুদ্ধে জিতে এখন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন ডিসেরগড়ের রিমা আচার্য ও তাঁর বোন রিয়া। বিনিময়ে কোনও অর্থ নিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, গত কয়েক দিনে ১১ জনের ঘরে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে দিয়েছেন অক্সিজেন মাস্ক এবং অক্সি-ফ্লো মিটার।

রিমা দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তথ্যপ্রযুক্তির স্নাতক। রিয়া বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক। বছর তিনেক আগে আধুনিক পোশাক তৈরির ব্যবসা শুরু করেন দুই বোন। সেখানে নিয়োগ করেছেন এলাকার কয়েকজন যুবক-যুবতীকে। ব্যবসার পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন করোনা-রোগীদের সেবায়। দুই বোন জানান, দিনকয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে তাঁরা কোভিড-আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন সরবরাহের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। তার পরে বহু মানুষ তাঁদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়ে ফোন করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা ১১ জনের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে পেরেছি। সঙ্গে দিয়েছি অক্সি-ফ্লো মিটার ও অক্সিজেন মাস্ক। সিলিন্ডার দিতে যাওয়ার সময়ে প্রশিক্ষিত এক জন স্বাস্থ্যকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যাই।’’

কীসের তাগিদে এই উদ্যোগ? রিমা জানান, মাসখানেক আগে তিনি ও রিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। রিয়ার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। তা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক চেষ্টায় প্রায় তিন গুণ টাকা খরচ করে সিলিন্ডার জোগাড় করেন তাঁরা। দুই বোনের কথায়, ‘‘করোনা-আক্রান্তদের কষ্ট আমরা বুঝি। অনেক টাকা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁদের কষ্ট অনুভব করি। সেই ভাবনা থেকেই এই কাজ শুরু করেছি।’’ মেয়েদের কাজে খুশি তাঁদের অভিভাবকেরাও। বাবা সমীর আচার্য ও মা চুমকিদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমাজে বাস করতে হলে এমন কাজ তো করতেই হবে।’’

আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি তাঁর এক আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর শরীরে হঠাৎ অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। সঞ্চিতাদেবী বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দুই বোনের ফোন নম্বর পেয়ে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওঁরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।’’

দুই বোন জানান, তাঁদের কাছে তিনটি ২০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। প্রতিটির রিফিলিং খরচ ৬৭০ টাকা। পরিষেবা দেওয়ার জন্য রোগী পিছু খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৫০ টাকা। রিমা বলেন, ‘‘টাকাটা বড় নয়। দুঃসময়ে অক্সিজেন দিয়ে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানোর তৃপ্তি অনেক বেশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE