এ ভাবেই নিয়ে আসা হয়েছিল টিয়াগুলিকে। নিজস্ব চিত্র
পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়ে, প্রায় আড়াইশোটি টিয়া-সহ দু’জন ব্যক্তিকে আটক করে বন দফতরের হাতে তুলে দিল আরপিএফ। পরে, মহম্মদ ওয়াসিম ও মহম্মদ শামিম নামে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা আসানসোলর রেলপাড়ের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসানসোল স্টেশনের ঘটনা। পাখিগুলিকে উদ্ধার করে সেগুলি খোলা জায়গায় ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি, দু’জনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করছে বন দফতর।
পূর্ব রেলের আসানসোল রেল ডিভিশনের সিনিয়র সিকিওরিটি কমিশনার চন্দ্রমোহন মিশ্র জানান, এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ আসানসোল স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম দিকে, হাওড়ামুখী শিপ্রা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে অভিযুক্ত দু’জন নামেন। নিজস্ব সূত্রে আরপিএফ খবর পায়, ওই দু’জনের কাছে দু’টি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং ঢাকা দেওয়া তিনটি খাঁচায় প্রচুর পাখি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চন্দ্রমোহন বলেন, “কর্তব্যরত আরপিএফ অফিসার ও কর্মীরা ওই দু’জনকে আটক করে, ব্যাগ ও খাঁচাগুলি পরীক্ষা করে দেখেন প্রায় ২৫০টি টিয়া পাখি রয়েছে। এর পরেই বন দফতরকে ডেকে পাঠিয়ে পাখি ও ওই দু’জনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’জন অভিযুক্ত এবং পাখিগুলিকে দফতরের আসানসোল টেরিটোরিয়াল রেঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিএফও (দুর্গাপুর) বুদ্ধদেব মণ্ডল বলেন, “টিয়া ধরা ও বাজারে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। এই কাজ করার জন্য ওই দু’জনকে ১৯৭২-এর ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন’ আইনে গ্রেফতার করে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
বন-কর্তারা জানান, জেরায় ধৃতেরা তাঁদের কাছে জানিয়েছেন, পাখিগুলিকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ (ইলাহাবাদ) থেকে আনা হচ্ছিল। সেগুলি বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যেহেতু অভিযুক্তেরা আসানসোলের বাসিন্দা, তাই নিরাপদে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি পৌঁছে যেতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন। পরে, সুযোগ মতো পাখিগুলি বর্ধমানে পৌঁছে দিতেন।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, টিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি বাচ্চা রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা ঢাকা দেওয়া খাঁচা ও প্লাস্টিকের ব্যাগে বন্দি থাকায় সেগুলি অসুস্থ। তাই পূর্ণবয়স্ক পাখি ও বাচ্চাগুলিকে একটি বড় খাঁচায় রেখে জল ও খাবার খাইয়ে সেগুলি সুস্থ করে তোলা হচ্ছে। পূর্ণবয়স্ক পাখিগুলিকে দু’-এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাচ্চাগুলি একটু বড় হলে, তার পরে, সেগুলিকে ছাড়া হবে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া পূর্ণবয়স্ক পাখিগুলির প্রতিটিই স্ত্রী-পাখি। বনকর্তারা জানান, স্ত্রী-পাখিরা গাছের কোটরে বাচ্চা দেওয়ার পরে, সেগুলি বিকেলে বাচ্চাকে পরিচর্যা ও খাবার খাওয়াতে আসে। সম্ভবত ‘পাখি-চোরেরা’ সে সময়ই গাছের কোঠর থেকে স্ত্রী-পাখি ও বাচ্চাগুলিকে ধরেছিল।
বুদ্ধদেব বলেন, “আসানসোল, দুর্গাপুর, বারাবনি, সালানপুর-সহ আশপাশের এলাকায় এই সময় মুক্ত আকাশে প্রচুর টিয়া উড়তে দেখা যায়। পাখি-চোরেরা যাতে, সেগুলি ধরতে না পারে, সে জন্যও পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy