এই দাঁতালটিই মঙ্গলবার দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছে হিরাপুর থানা এলাকায়। ছবি: পাপন চৌধুরী
ভোর ৬টা। ঝাপসা আঁধার চারপাশে। মাঠ থেকে শৌচকর্ম সেরে দু’জনের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধা অলকা বাউড়ি (৬৫)। আচমকা, দেখা গেল রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে বিশাল দাঁতাল। অন্য দু’জন চম্পট দিতে পারলেও অলকাদেবী হুমড়ি খেয়ে পড়েন দাঁতালের সামনে। এর পরে দাঁতালটি বৃদ্ধাকে প্রথমে শুঁড়ে তুলে আছাড় দেয় ও পরে পা দিয়ে থেঁতলে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। মঙ্গলবার হিরাপুর থানার বার্নপুরের কালাঝরিয়া কুমোরপাড়ার ঘটনা। হাতিটিকে বনকর্মীরা তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সেটি তালকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা রামু যাদব (৪২) নামে আরও এক জনকে পিষে দেয়।
এ দিন অলকাদেবীর সঙ্গে তাঁর মেয়ের জা মামণিদেবী এবং পড়শি রবীন পাল মাঠে গিয়েছিলেন। মামণিদেবী বলেন, ‘‘কিছুটা দৌড়নোর পরেই বুঝি মাসিমা নেই। পিছন ফিরে দেখি, দাঁতালটা মাসিমাকে থেঁতলে দিচ্ছে।’’ ওই দু’জনের কাছ থেকে খবর পেয়ে কেউ দাঁতাল তাড়াতে বাড়ির বাইরে বেরোন। কেউ বা পটকা ফাটিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে হাতিকে গ্রাম ছাড়া করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দাঁতালের ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় সব বাসিন্দা বাড়িতে ঢুকে দরজা দেন।
ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে আসেন দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার বন দফতরের কর্মী, আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা। আসেন মহকুমাশাসক (আসানসোল) দেবজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) শান্তব্রত চন্দ। বন দফতর জানায়, হাতিটিকে নিরাপদে গ্রামের বাইরে বার করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল বনকর্মীরা মাইকে করে বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করছেন। তাঁরা জানান, গ্রামের চারপাশে দাঁতালটির গতিবিধির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এডিএফও (দুর্গাপুর) শুভাশিস সরকার বলেন, ‘‘দাঁতালটি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থেকে এসেছে। সোমবার সেখানে এক জনকে মেরেছে। তাণ্ডব চালিয়েছে। বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে রাতে দাঁতালটি দামোদর পেরিয়ে বার্নপুরে ইস্কোর বিমানঘাঁটির পাশের রাস্তা ধরে কালাঝরিয়ায় ঢুকে পড়ে।’’
শুভাশিসবাবু জানান, ঘুমপাড়ানি ওষুধ দিয়ে দাঁতালটিকে ‘বশে’ আনা ঝুঁকির। কারণ, ওষুধের মাত্রা পরিমাণ মতো না হলে উল্টে বিপদ হতে পারে। তাই রাতের দিকে হুলা পার্টি দিয়ে হাতিটিকে এলাকা ছাড়া করাটা তুলনামূলক বেশি নিরাপদ। গ্রামবাসী জানান, এর আগে ২০০৮-এ এই গ্রামে কালাঝরিয়া গ্রামের কাছে হাতি ঢুকেছিল। কিন্তু সে বার কোনও বিপত্তি ঘটেনি। গ্রামবাসীর আশঙ্কা, মঙ্গলবার দাঁতালটি যে রাস্তা ধরে এসেছে, সেটির আশপাশে ঘন জঙ্গল। দাঁতালের দল দামোদর সাঁতরে ওই জঙ্গল-পথ দিয়ে ঢুকে পড়তে পারে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়েও দিনভর চর্চা ছিল গ্রামে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হুলা পার্টি ও বন দফতরের কর্মীরা দাঁতালটিকে তাড়িয়ে গ্রামছাড়া করে। সেই সময়ে কালাঝরিয়ার থেকে দু’কিলোমিটার দূরের স্থানীয় তালকুড়ি গ্রামে ঢুকে পড়ে সেটি। সেখানে দাঁতালটির সামনে পড়ে যান চাষাপট্টির বাসিন্দা রামুবাবু। তাঁকে পিষে মারে দাঁতালটি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতিটি ওই গ্রামেই রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy