খননকাজে ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা, ভাতারের মাহাতে গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময়ে ভূগর্ভে মেলা পুরনো কাঠামো পরিদর্শনে এলেন রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ। সোমবার ভাতারের মাহাতা গ্রামে ওই কাঠামো খতিয়ে দেখার পরে তিনি মনে করছেন, সেটি আদতে একটি সমাধি।
রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর সুদীপ ঘোষ বলেন, “কাঠামোটি অনেকটা পুরনো সমাধির। আর্চের গঠন অনুযায়ী এ ধরনের সমাধি চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে দেখা যেত। ইটের আকার বা চুনসুরকির গাঁথনি দেখে বিশেষজ্ঞের মনে হয়েছে, এটি ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকের তৈরি হতে পারে।’’ তিনি জানান, সেখান থেকে কাঠকয়লা ও মাটির পাত্রের ভাঙা টুকরো পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করার পরে প্রয়োজনে আরও বড় আকারের খননকার্য করা হতে পারে। তত দিন ওই কাঠামো নষ্ট করা যাবে না। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রিপোর্ট জানা যাবে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি মাহাতা গ্রামের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা গোলেনুর বিবি বাড়ি তৈরির জন্য জমিতে ভিত খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। শুক্রবার সেই কাজ করার সময়েই ওই কাঠামো দেখতে পান নির্মাণকর্মীরা। কৌতুহল তৈরি হয় এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রশাসনের তরফে কাজ বন্ধ করে জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগে।
এ দিন দুপুরে রাজ্য পুরাতত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রকাশচন্দ্র মাইতি গ্রামে পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। আশপাশের এলাকার বহু মানুষ ভিড় জমান। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রকাশবাবু ওই কাঠামো খুঁটিয়ে দেখেন ও মাপজোক করেন। কাঠামোর ভিতরের অংশের মাটি খোঁড়া হয়। প্রায় ফুট দেড়েক খোঁড়ার পরে গাঁথনির শেষ অংশ দেখা যায়। সেখান থেকে কাঠকয়লা, মাটির পাত্রের ভাঙা টুকরো এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঠামোর ভিতরের ফাঁকা অংশ প্রায় ৭.৫ ফুট লম্বা ও ২ ফুট ২ ইঞ্চি চওড়া। উচ্চতা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি। মেঝে দুরমুশ করা। ভেতরের দেওয়ালে একটি ‘আর্চ’ রয়েছে। তাতে গথিক স্থাপত্যেরও ছাপ রয়েছে, বলেও দাবি তাঁর।
গোলেনুর বিবি বলেন, “ভেবেছিলাম এর পরে বাড়ি তৈরির অনুমতি মিলবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানাননি। কবে থেকে বাড়ি তৈরি করতে পারব, বুঝতে পারছি না!’’ মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু সরকার(বর্ধমান উত্তর) বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনও কিছু জানানো হয়নি। তা জানানোর পরেই জেলা প্রশাসনের তরফে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউরেটর তথা ইতিহাসবিদ রঙ্গনকান্তি জানা বলেন, “সম্ভ্রান্ত অনেক পরিবারে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন সমাধি তৈরির রেওয়াজ ছিল। এটা তেমনই কিছু হতে পারে। এই সমাধি কার, তা জানা গেলে এলাকার ইতিহাসের একটি নতুন দিক উঠে আসতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy