বোর্ড গঠনের দিন দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে কোনও রকম প্রকাশ্য কাজিয়া চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। তার জন্য আগেভাগেই কাউন্সিলরদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে রাখছেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।
বর্ধমান জেলায় দলের সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলরদের কাছ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত মেনে চলার সম্মতিপত্রও আগাম আদায় করে রাখছেন তৃণমূলের অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সভাপতি সুব্রত বক্সী।
বর্ধমানে কাটোয়া, কালনা, মেমারি ও দাঁইহাটে এ দফায় পুর নির্বাচন হয়েছে। চারটির মধ্যে দাঁইহাট বাদে বাকি তিনটিতেই তৃণমূল পুরবোর্ড গড়তে চলেছে। দাঁইহাটে সিপিএম বোর্ড গঠন করবে। কাটোয়ায় ২০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল ১০টি করে জিতেছে। এমনিতে ‘টাই’ হলে পুরবোর্ড গড়ার জন্য ‘টস’ হয়। কিন্তু ফল বেরনোর পরেই কাটোয়ার বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পুরবোর্ড দখলের দৌড়ে তাঁরা থাকবেন না। বরং শপথ নিয়ে তাঁরা পুরসভা থেকে চলে আসবেন।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে কোথাও কোনও গোষ্ঠীকোন্দল মাথাচাড়া দিক, তৃণমূল নেতৃত্ব তা চাইছেন না। তাই কাটোয়া ও কালনার নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসেছিলেন সুব্রতবাবু। বৈঠকে হাজির ছিলেন মন্ত্রী তথা দলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথও। রায়নায় নিহত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বাড়িতে সমবেদনা জানিয়ে কলকাতায় ফেরার পথেই মেমারির কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করে এসেছিলেন। ওই সব বৈঠকে সম্মতি আদায়ের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের তাঁরা সতর্ক করেছেন, কোনও রকম অনৈতিক কাজে কেউ লিপ্ত থাকলে তাঁদের শাস্তি অনিবার্য।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কাটোয়ায় তৃণমূলের সব কাউন্সিলরই পুরপ্রধান হিসাবে অমর রামের নাম প্রস্তাব করেছেন। উপপুরপ্রধান পদের জন্য সাত জন কাউন্সিলর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী জঙ্গল শেখের নাম জানিয়েছেন। পুরসভার বিভিন্ন পদের জন্য জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দরবার করছেন কাউন্সিলরেরা। তবে দলের সিদ্ধান্ত মানবেন বলে লিখিত ভাবে জানিয়েও এসেছেন তাঁরা।
কালনার ১২ জন কাউন্সিলরও মুখবন্ধ খামে সুব্রতবাবুর কাছে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের নাম প্রস্তাব করেছেন। এমনিতে গত বারের প্রধান তথা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এ বার পুরভোটে হেরে যাওয়ার ফলে পুরপ্রধান নিয়ে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একটি ওয়ার্ড থেকে পরপর তিনবার বিজয়ী এক কাউন্সিলরকে পুরসভার দায়িত্ব দিতে পারে দল। মেমারির ক্ষেত্রে জটিলতার পরিমাণ আরও অনেকটাই বেশি হওয়ায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেমারির পুরপ্রধান নির্বাচিত করবেন বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
জেলায় এক মাত্র মেমারিতেই ভোটের আগে থেকে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের দলীয় দফতর দখল করে নির্বাচনী কার্যালয় খোলার অভিযোগ অভিযোগ উঠেছিল। দু’জন এ রকম প্রার্থী পুরভোটে জয়লাভও করেছেন। ফলে মেমারি সামাল দেওয়াটা তৃণমূল নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত মঙ্গলবার রায়নায় দলের নিহত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বাড়িতে ঘুরে কলকাতা ফেরার পথে মেমারিতে যান সুব্রত বক্সী ও স্বপন দেবনাথ। সেখানে গিয়ে নবনির্বাচিত ১১ জন কাউন্সিলরের কাছ থেকে তাঁরা দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত মানবেন বলে সম্মতিপত্র আদায় করেন। জয়ী দুই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে আবেদনও করেছেন একটি সূত্রের দাবি। স্বপনবাবু বলেন, “নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দলনেত্রী ও রাজ্য নেতৃত্ব নেবেন।” আগামী ২১ মে পুরবোর্ড গঠন হবে। সে দিনই কলকাতা থেকে খামবন্ধ চিঠিতে জানা যাবে, কার ভাগ্যে কী আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy