Advertisement
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
দ্বন্দ্বের ফাঁকেই বেড়েছে বিজেপি

দলের কর্মীকে পিটিয়ে খুনের পরে সরব গলসির তৃণমূল নেতারা

গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, কয়েক বছর আগে একটি মনসা মন্দির তৈরি নিয়ে দু’পাড়ার গোলমাল হয়। তখনকার মতো থেমে গেলেও এখন শক্তি বাড়ায় ওই পক্ষই হামলা করেছে।

স্বজন হারিয়ে কান্না। ছবি: কাজল মির্জা ও উদিত সিংহ

স্বজন হারিয়ে কান্না। ছবি: কাজল মির্জা ও উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

টক্কর ছিল পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই।

গলসি ২ ব্লকের সাটিনন্দী গ্রামে ১১টি আসনের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটে ছ’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। যে ৫টা আসনে ভোট হয় তাতে বিজেপি ২, তৃণমূল ১, সিপিএম ১ ও নির্দল একটি আসন পায়। লোকসভা ভোটে অবশ্য ছবিটা আলাদা। গ্রামের ওই ১১টি আসনের সাতটিতে বিজেপি এগিয়ে যায়, তৃণমূলের দখলে থাকে চারটি।

খানো জংশন থেকে সাটিনন্দী গ্রাম পর্যন্ত যাওয়ার পথে হাতেগোনা কয়েকটি বিজেপির পতাকা, দুটি দেওয়াল লিখন ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না। বাকি সবটাই ভরা তৃণমূলের ঘাসফুল ছাপে। কিন্তু চোখের দেখা যে সব নয়, বোঝা যায় ভোটের ফলে। সোমবার এই গ্রামেই তৃণমূল কর্মী জয়দেব রায়কে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির ২৬ জনের বিরুদ্ধে। ওই কর্মীর বুথে অবশ্য ১৭৬ ভোটে জিতেছিল তৃণমূলই। দলের একাংশের দাবি, এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। জেলা পরিষদ সদস্য সুভাষ পুইলে বলেন, ‘‘অন্তর্কলহের জন্যই দলের এই হাল। তবে ওই কর্মীর মৃত্যুর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। এর জন্য বিজেপি দায়ী।’’

মঙ্গলবার নিহতের স্ত্রী চম্পা রায় দাবি করেন, ‘‘আমরা গাজন দেখতে মেয়ের বাড়ি বর্ধমানের কাছে চাঁড়ুল গ্রামে গিয়েছিলাম। সোমবার সকাল ৬টা নাগাদ নাতিকে নিয়ে ফিরি। ও কাজে চলে যায়। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আবার বেরোয়। তৃণমূল করত বলেই বিজেপির লোকেরা আক্রোশে মেরে দিল আমার স্বামীকে।’’

আক্রোশ কেন? গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, কয়েক বছর আগে একটি মনসা মন্দির তৈরি নিয়ে দু’পাড়ার গোলমাল হয়। তখনকার মতো থেমে গেলেও এখন শক্তি বাড়ায় ওই পক্ষই হামলা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুরু থেকেই তৃণমূল করেন জয়দেববাবু। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তেঁতুলেপাড়া এলাকায় কার্যত মোড়ল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এলাকার বাসিন্দা আভা রায়, মিঠু মালিক, ঝর্ণা মালিকদের দাবি, ‘‘কেউ মদ খেয়ে স্ত্রীকে মারধর করলে, গালিগালাজ করলে তার প্রতিবাদ করতেন জয়দেবদা। তাতেই রাগ ছিল অনেকের।’’

এই মনসা মন্দির ঘিরেই গোলমালের সূত্রপাত, দাবি আহতদের পরিবারের।

সোমবার রাতে জয়দেববাবুর উপর হামলার সময় আহত হন আরও তিন তৃণমূল কর্মী। এ দিন নিহতের দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ, জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। মাল্যদানের পরে, দলের পতাকায় দেহ মুড়ে বাড়ি হয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আহতদের বাড়ি যান নেতারা। সেখানেই তাঁদের ঘিরে ক্ষোভ উগড়ে দেন নিচুতলার কর্মীরা। পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জানান অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মালিকের দাবি, ‘‘আমাদের পরিজন মারা গেল। অথচ সকাল থেকে পুলিশ আমাদেরই তাড়া করছে। দিনভর আমরা ৫০-৬০ জন মাঠেই ছিলাম।’’ বিজেপির দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে বলেও এমনটা ঘটছে। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক (বর্ধমান সদর) জয়দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ওখানে জিতলেও সংগঠন সে ভাবে নেই। নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলের জেরেই ওই ভদ্রলোক মারা গিয়েছেন। এখন বিজেপির নামে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে।’’

আহত তিন তৃণমূল কর্মী।

গ্রামে ঢুকতে দেখা যায়, থমথমে চারপাশ। হাতে গোনা কয়েকজন মহিলা দাঁড়িয়ে। বেশির ভাগ বাড়ি তালাবন্ধ, দোকানের শাটার নামানো। পুকুর পাড় থেকে ঢালাই রাস্তা ধরে বাঁ দিকে ঢুকলেই জয়দেববাবুর বাড়ি। খড়ের চাল, দু’কামরার মাটির বাড়ি। একচিলতে জায়গায় রান্নাঘর। তার পাশেই অবশ্য সরকারি প্রকল্পে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে জয়দেববাবুদের। আহত তিন জনও সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। নিহতের ছেলে দিনু রায় বলেন, ‘‘বাবা কোনও সাতেপাঁচে থাকতেন না। কোনও নেশা ছিল না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রাণ দিতে হল।’’ তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের দাবি, গ্রামের অশান্ত পরিবেশের কথা পুলিশকে, উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত বলেও তাঁদের দাবি। স্থানীয় ভুড়িগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুবোধ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।’’ যদিও গলসি থানার দাবি, খবর পেয়েই তাঁরা ওই গ্রামে যাওয়ার জন্য বার হন। পথে খানোর কাছে রেলগেটে ৪০ মিনিট আটকে থাকতে হয়। তাতেই দেরি।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy