এই জমি ঘিরে বিতর্ক নিয়ামতপুরে। নিজস্ব চিত্র।
খাস জমি ‘দখলের চেষ্টা’ করছে মাফিয়ারা। তাতে বাধা দেওয়ায় মাফিয়াদের পাশাপাশি, এক তৃণমূল নেতার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কুলটির নিয়ামতপুরের ঘটনা। ওই নেতার বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক মহিলা। ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে, স্থানীয় বাসিন্দারাও সই সংগ্রহ শুরু করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু করা হয়েছে। খাস জমির ‘দখল’ রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কুলটি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তপন মণ্ডল।
আসানসোল পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ সারদাসঙ্ঘ লাগোয়া এলাকায় কয়েক কাঠা সরকারি জমি আছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার বেশ কিছু জমি মাফিয়া ওই জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ তোলার চেষ্টা করছে। গত কয়েক দিন ধরে বাসিন্দাদের একাংশ জোট বেধে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত চক্রবর্তীর দাবি, “আগেও জমি দখলের চেষ্টা হয়েছে। স্থানীয়েরা যৌথ ভাবে বাধা দেওয়ায়, তা বন্ধ হয়। ফের জমি মাফিয়ারা সক্রিয় হয়েছে। বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে জানিয়েছি।” কিন্তু অভিযোগ, এর পরেও জমি মাফিয়ারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উল্টে জমি ‘দখলের চেষ্টা’ রোখায় মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে মাফিয়ারা বাসিন্দাদের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তপন মণ্ডলও সে দিন মাফিয়াদের সঙ্গে এলাকায় গিয়ে হুমকি দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জমির ‘দখল’ রুখতে অজিত চক্রবর্তীই অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায়, তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এবং তাঁর নাম ধরে গালিগালাজও করা হয়। ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না অজিত। তাঁর স্ত্রী মনোনিকা ছেলেকে নিয়ে একাই বাড়িতে ছিলেন। তিনি রীতি মতো আতঙ্কে ভুগতে থাকেন। পরে প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ করায়, তৃণমূল নেতা তপন-সহ জমি মাফিয়ারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। মঙ্গলবারই নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়িতে তপনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেন অজিতের স্ত্রী।
এ দিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন এলাকার বিজেপি কাউন্সিলর অমিত তুলসীয়ান। তিনি বলেন, “২০১৫-য় পুরসভার তরফে ওই খাস জমিতে স্থানীয়দের সুবিধার জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে জমির দখল আমরা মানব না।” অমিত জানান, যুক্তিসঙ্গত কারণেই স্থানীয়েরা যৌথ ভাবে বাধা দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতার ‘হুমকি’ খুবই খারাপ ঘটনা। স্থানীয়েরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে, সই সংগ্রহ করছেন।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা সফরে এসে জমি প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শুনছি, বহু সরকারি জমি একে তাকে দিচ্ছে। সরকারি জমি যদি কেউ কাউকে দিয়ে থাকে, তা হলে সরকার আইন মতো ব্যবস্থা নেবে।” কুলটি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক জয়দেব কর জানান, দফতরের উদ্যোগে ওখানকার সরকারি জমি অনেক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগেও জমি দখলের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা রোখাও হয়েছে। জয়দেব বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি। জমি দখল রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এ দিকে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা তপন মণ্ডল। তাঁর দাবি, “আমি এলাকায় গিয়ে, বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। কোনও রকম হুমকি দিইনি।” কী বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন? তপন বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা যে জমি সরকারের বলে দাবি করছেন, তা আদতে এলাকার এক ব্যক্তির। সে কথাই জানাতে গিয়েছিলাম।” বাসিন্দাদের অভিযোগ ও তৃণমূল নেতার দাবি প্রসঙ্গে দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy