করঙ্গপাড়ায় বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, আগাম আঁচ করতে পারেননি তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে গিয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়া নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের পাড়ায় প্রচারে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। ক্ষোভ সামাল দিতে হিমসিম হলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
রবিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন শহরের দেড় দশকের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরে বাম-কংগ্রেসের জোটের তরফে এই কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী। দলবদল করেই বিশ্বনাথবাবু তোপ দেগেছিলেন অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁরা অহঙ্কারী। আমাকে নানা ভাবে অপমান করা হয়েছে। অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের অহঙ্কার আমাকে দল ছাড়তে বাধ্য করেছে।’’ এর পরে এ দিন সেই বিশ্বনাথবাবুর এলাকায় গিয়ে নানা নাগরিক পরিষেবা নিয়ে কিছু বাসিন্দার ক্ষোভের মুখে পড়েন অপূর্ববাবু।
বিশ্বনাথবাবু নিজের ওয়ার্ড ৩০ নম্বরে বৃহস্পতিবার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের করঙ্গপাড়া এলাকায় প্রচারে যান অপূর্ববাবু। সেখানেই বাড়ি বিশ্বনাথবাবুর। এই ওয়ার্ড থেকেই তিন বার কাউন্সিলর হয়েছিলেন তিনি। ২০১২ সালের পুরভোটে এই ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি ৪২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলরও হন। করঙ্গপাড়া গ্রামে রাজনৈতিক সভা, সমিতি, মিছিল করায় আপত্তি রয়েছে বাসিন্দাদের। শুধু পায়ে হেঁটে প্রচার করতে পারেন প্রার্থীরা।
দীর্ঘদিনের সেই প্রথা মেনে এ দিন এলাকার বাইরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার সারছিলেন অপূর্ববাবু। বাউড়ি পাড়ায় যেতেই কার্যত ছেঁকে ধরেন কয়েক জন বাসিন্দা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিধায়ক হওয়ার পরে গত পাঁচ বছরে অপূর্ববাবু তাঁদের খোঁজখবর নেননি। বিপদে-আপদে বিশ্বনাথবাবুই পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্ল্যান্টে, ফুড কর্পোরেশনের গুদামে, পুরসভার একশো দিনের প্রকল্পে পাড়ার অনেকের কাজ জুটিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেউ বলেন, ‘‘বাড়ি-ঘর নেই। শৌচাগার নেই। একশো দিনের কাজে মাত্র একশো টাকা বেতন মেলে। কেউ খোঁজ নেয় না। এখন ভোটের আগে আমাদের মনে পড়েছে?’’
সরস্বতী বাউড়ি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘লোকের ঘরে কাজ করে বেঁচে আছি। কেউ দেখে না আমাদের।’’ মীরা বাউড়ির বক্তব্য, ‘‘দু’বছর ধরে কাজের দাবিতে ঘুরেছি। কেউ দেখে না।’’ সাগরি বাউড়ি নামে এক মহিলা অপূর্ববাবুকে সরাসরি বলেন, ‘‘বিশু (বিশ্বনাথ পাড়িয়ালি) অনেক কিছু করেছে। বিশ্বম্ভর (বিশ্বম্ভর সাহা, বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলর) বা আপনি কিছুই করেননি।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁদের আশ্বাস দিতে থাকেন, এত দিন তো বিশ্বনাথ দেখতেন। এখন থেকে আমরা দেখব। কোনও সমস্যা হবে না। অপূর্ববাবু নিজে এগিয়ে গিয়ে হাতজোড় করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তাঁর পরেও উপস্থিত বাসিন্দাদের অনেকে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। দলের নেতা-কর্মীরা অপূর্ববাবুকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন হিসেবেই দেখছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বিশ্বনাথবাবু যাতে বেশি গুরুত্ব না পেয়ে যান সে জন্য দলীয় প্রচারে বিশ্বনাথবাবুকে ‘ওয়ার্ডের এক নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। মূলত যে সব এলাকায় বিশ্বনাথবাবুর প্রভাব রয়েছে বলে তাঁর সমর্থকদের দাবি, সেই সব এলাকার লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে দলের কাজকর্ম দেখেন ডিপিএলে আইএনটিটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক আলোময় ঘড়ুই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাটিকে আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’ তাঁর দাবি, বিশ্বনাথবাবুর নিজস্ব কিছু অনুগামী থাকতেই পারেন। কিন্তু ভোটে প্রার্থী হিসাবে তাঁকে সমর্থন করার তেমন কেউ নেই। আলোময়বাবুর দাবি, ‘‘ভোটের ফলাফলে আমরা প্রমাণ করে দেব, রাজনীতিতে চমক দিয়ে কিছু হয় না।’’
অপূর্ববাবু অবশ্য এই ঘটনার পিছনে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে বহু কাজ হয়েছে। সেই সাফল্যের জন্যই হাজার-হাজার মানুষ সভায়-মিছিলে আসছেন। তেমনই হয়তো কিছু কাজ এখনও করা যায়নি। সেগুলোও নিশ্চয়ই শুনতে হবে। আমি এ ভাবেই বিষয়টিকে দেখছি।’’
এই ঘটনা শোনার পরে বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘আমি যা বলার আগেই বলেছি। বাকিটা মানুষ বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy