—নিজস্ব চিত্র।
ছিল শিশুবিকাশ কেন্দ্র। রোজ সকালে গ্রামের বাচ্চারা ব্যাগ নিয়ে পড়াশোনা করতে আসত সেখানে। রাতারাতিই সেই শিক্ষাকেন্দ্র বদলে গেল তৃণমূলের পার্টি অফিসে! সকালে তা গ্রামবাসীদের নজরে পড়ার পরেই উত্তেজনা ছড়াল পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বারিশালিতে। এর বিহিত চেয়ে বিডিও এবং মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। শিশুবিকাশ কেন্দ্র ‘দখল’ করে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ তুলে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তৈরি হওয়ায় আলোচনায় বসে সমাধানের পথ খোঁজার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
বারিশালি গ্রামের অ্যাজবেস্টস চালার একটি বাড়িতে বড় বড় করে লেখা, ‘বারিশালি ২২ নম্বর শিশুবিকাশ কেন্দ্র’। তার ঠিক নীচে আবার তৃণমূলের প্রতীক আঁকা হয়েছে। প্রতীকের মাথায় সবুজ রঙে লেখা, ‘বারিশালি তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’। এ নিয়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাড়িটিই গ্রামের শিশুবিকাশ কেন্দ্র ছিল। দিন কয়েক আগে সেই কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হয়েছে বারিশালি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে। তার পর থেকে বাড়িটি ফাঁকাই পড়ে ছিল। অভিযোগ, বুধবার সকালে দেখা যায়, বাড়িটির ‘দখল’ নিয়েছে শাসকদল। রাতারাতি সেটিকে তৃণমূলের কার্যালয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বাড়িটিকে প্রশাসনের কোনও জনকল্যাণকর কাজে কাজে লাগানো যেতে পারত। সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহার করা যেত সেখানে। সেটাই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমাশাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘ইমেলে পাঠানো চিঠি এখনও দেখিনি। ওই চিঠির বিষয়বস্তু দেখার পর পুলিশকে জানানো হবে। প্রশাসনিক ভাবেও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মনোরঞ্জন বটব্যালের দাবি, বারিশালি গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধু রায় সিপিএমের দলীয় অফিস করার জন্যে ১৯৮৪ সালে জায়গাটি দান করেছিলেন। যার দাগ নম্বর— ২২৮৯। খতিয়ান নম্বর— ১৫৮/২। এর কিছু দিনের মধ্যেই গ্রামে শিশুবিকাশ কেন্দ্র অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি তৈরির প্রস্তাব আসে। কিন্তু তখন শিশুবিকাশ কেন্দ্র গড়ার জন্যে জায়গা না মেলায় জগবন্ধুর অনুমতিতেই ওই জায়গার একাংশে শিশুবিকাশ কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। সেই থেকে কিছু দিন আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতেই শিশুবিকাশ কেন্দ্র চলে। বাড়িটির প্রকৃত মালিক জগবন্ধু পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছেন। আর তিনি যাঁকে ওই জমিটি দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সিপিএমের নেতা আলম সাহানাও পাঁচ মাস আগে মারা গিয়েছেন।
এ ব্যাপারে খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, ‘‘দখলদারি নীতিতে তৃণমূল বিশ্বাস করে না। সিপিএমের কয়েক জন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে আলোচনায় বসে এই বিষয়টি সমাধানের পথ বের করা হবে।’’ যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন, “ওই বাড়ি রাজনৈতিক দলের হাতে চলে গেলে এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষেরা সমস্যায় পড়বেন। তাই বাড়িটিকে যাতে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়, সেটাই প্রশাসনের দেখা উচিত।’’ জেলার বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘দখলের রাজনীতিতে তৃণমূল সিদ্ধহস্ত। তাই ভোটের সময় ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য বুথ দখল থেকে শুরু করে শিশুবিকাশ কেন্দ্র দখল— সবই তৃণমূলের রাজত্বে চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy