বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনাসভায়। নিজস্ব চিত্র
তুষের আগুন পাল্টে দিতে পারে ‘গরম আবহাওয়া’। সে জন্য পূর্ব বর্ধমানের চালকলগুলিতে তুষের মাধ্যমে উৎপন্ন বিদ্যুৎকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিলেন ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র (এআইটি) অধ্যাপক জয়শ্রী রায়। এ নিয়ে বর্ধমান চালকল মালিক সমিতির সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। তবে ওই সমিতির দাবি, এক সময়ে তুষকে কাজে লাগিয়ে চালকল চালানো হত। কিন্তু তাতে যে বর্জ্য উৎপন্ন হত, তাতেও দূষণ হচ্ছিল।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ দু’দিনের আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছে গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের বিদ্যাসাগর হলে। বুধবার প্রথমার্ধে আইএসআইয়ের অধ্যাপক মানসরঞ্জন গুপ্ত নানা বিধ কর নিয়ে আলোচনা করেন। দ্বিতীয়ার্ধে ছিল জয়শ্রীদেবীর বিশেষ বক্তৃতা। তিনি জানান, এক সময়ে ধারণা ছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মাথা পিছু কার্বন-ডাই অক্সাইড, হাইড্রো-কার্বন বেশি হওয়ায় উষ্ণায়ন হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, উন্নত দেশগুলিতে মাথা পিছু কার্বন-ডাই অক্সাইড, হাইড্রো-কার্বন বেশি বেরোয়। সে জন্য সব দেশকেই অচিরাচরিত বা বিকল্প শক্তির কথা ভাবতে হবে। তাঁর কথায়, “গরম ও আর্দ্রতার জন্যে দেশের চারটি মেট্রো শহরে কাজ করার উৎসাহ কমে যাচ্ছে। মানুষ কাজ করার শক্তি পাচ্ছেন না। সে জন্য শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেখানেও বাধানিষেধ চলে এসেছে।’’ এ প্রসঙ্গে ভারতে সিমেন্ট তৈরির কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিরাচরিত শক্তির উৎপাদন কমিয়ে ফেলা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
পূর্ব বর্ধমানে শ’চারেক চালকল চালু রয়েছে। ‘পাওয়ার গ্রিড’ ব্যবহার করে চিরাচরিত শক্তির মাধ্যমে চালকলগুলি চলে। তার জেরে এক দিকে উষ্ণায়ন, অন্য দিকে দূষণের সমস্যা হয় বলে অভিযোগ। বর্ধমানের আলমগঞ্জ-ইছালাবাদ এলাকায় ২৭টি চালকল রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের দূষণে তাঁরা জেরবার হন। চালকল লাগোয়া চাষের জমিরও ক্ষতি হয়। প্রশাসনেরও নজরে রয়েছে বিষয়টি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান শহর থেকে চালকলগুলি অন্যত্র পাঠিয়ে ‘ফুডপার্ক’ তৈরির কথা বলেছিলেন। কিন্তু এক লপ্তে বড় জমি না মেলায় তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
আলোচনাসভার পরে, জয়শ্রীদেবী বলেন, “পূর্ব বর্ধমানে প্রচুর চাল উৎপন্ন হয়। স্বাভাবিক ভাবে তুষও মিলবে। তুষ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের শক্তি শূন্য। পরিবেশ দূষণও কম হবে। তুষ ব্যবহার করে চালকল চালানো যেতে পারে। তাতে আশপাশের জমির ফসলেরও ক্ষতি হবে না। এখন অনেক কারখানাই গ্রিড থেকে বেরিয়ে আসছে।’’
বর্ধমান জেলা চালকল সমিতির সম্পাদক সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘জয়শ্রীদেবীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। জেলার ১৩২টি চালকল তুষ ব্যবহার করত। কিন্তু তার জেরে উৎপন্ন বর্জ্যে যে দূষণ হয়, তাতে চালকল চালানো মুশকিল। তা নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োজন। তবেই তুষকে ব্যবহার করে চালকল চালানো যাবে।“
জয়শ্রীদেবীর কথায় উৎসাহিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ। বিভাগের শিক্ষক অরূপকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই চালকল মালিকদের নিয়ে আলোচনা করব। তুষ ব্যবহার করে চালকল চালালে দূষণ তো কমবেই, আর্থিক লাভও হবে, সেটা বোঝানো হবে।’’ চালকল মালিক সমিতির রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক অবশ্য বলেন, ‘‘বাজারের অভাবে চালকলগুলি ধুঁকছে। এখন নতুন পদ্ধতি নিয়ে কত জন মাথা ঘামাবেন, তা বলা মুশকিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy