বাঁ দিক থেকে, সাথী মণ্ডল, বিশ্বজিৎ বাগদি এবং রামকৃষ্ণ দে। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি-বাড়ি মাছ বিক্রি করে সংসার চালান বাবা। এমনই পরিবারের মেয়ে সাথী মণ্ডল এ বার মাধ্যমিকে ৬৭৬ নম্বর পেয়ে স্কুলে সেরা হয়েছে। তার লক্ষ্য, ডাক্তার হওয়া।
পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার শ্যামলা পঞ্চায়েতের ভুরি গ্রামের বাসিন্দা সাথী চিচুড়িয়া উপেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অষ্টম শ্রেণি থেকে সে প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। সেই ধারা বজায় রেখেছে মাধ্যমিকেও। সাথী জানায়, তার প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রিয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আর প্রিয় কবি ও লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার কথায়, ‘‘প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’
তার বাবা ভগবান মণ্ডল জানান, দুই মেয়েকে নিয়ে চার জনের সংসার। সাথী ছোট। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে রোজগার কমে গিয়েছে। আশা করি, সুদিন ফিরবে।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাথীর পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’
প্রতিকূলতাকে হারিয়ে সফল হয়েছে কাঁকসার বিরুডিহা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রামকৃষ্ণ দে ও বুদবুদের চাকতেঁতুল রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বিশ্বজিৎ বাগদিও। দু’জনের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৫৩০ ও ৫৫৮। তারাও স্কুলের মধ্যে সেরা।
বিরুডিহার বাসিন্দা, চাষি প্রাণহরি দে জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ছোট রামকৃষ্ণ। সামান্য জমি রয়েছে তাঁর। আনাজ চাষের পাশাপাশি, অন্যের জমিতে ভাগ চাষ করে সংসার চালান। রামকৃষ্ণের ইচ্ছা আইএএস অফিসার হওয়া। সে জানায়, একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরা কম বেতনে তাকে পড়াতেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে সে। অনলাইন ক্লাসের জন্য তার দিদি একটি মোবাইল দিয়েছে। তাকে পড়ার ফাঁকে বাবাকে সাহায্যও করতে হয় বলে জানায় রামকৃষ্ণ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা মুখোপাধ্যায় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চাষের কাজের জন্য রামকৃষ্ণ মাঝেমধ্যেই স্কুলে আসত পারত না। সব বাধা সরিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছে ও।’’
চাকতেঁতুল গ্রামের দিনমজুর বিজয় বাগদির ছেলে বিশ্বজিতের ইচ্ছা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা। বিজয়বাবু জানান, বাড়ির অবস্থা খারাপ বলে বিশ্বজিৎ কোনও কিছুর বায়না করত না। লোকের দেওয়া পুরনো জামাকাপড় পরে সে বড় হয়েছে। গ্রামেরই তিন জন গৃহশিক্ষক তাকে পড়াতেন। কিন্তু তাঁরা পারিশ্রমিকের কোনওদিন জোরাজুরি করেননি। বিজয়বাবু বলেন, ‘‘আশা করি, ছেলে প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে এগিয়ে যাবে।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রবণ দাসের আশা, বিশ্বজিৎ উন্নতি করবে।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy