Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
রেলসেতুর কৃতিত্ব কার, তর্জা শহরে

কাজ বাকি, ধোঁয়াশা রেলের উদ্বোধনেও

সেতু নির্মাণকারী সংস্থা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) গত ২৩ সেপ্টেম্বর রেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানায়, এখনও কী কী কাজ বাকি আছে সেতুতে।

 শেষ হয়নি সিঁড়ির কাজ। নিজস্ব চিত্র

শেষ হয়নি সিঁড়ির কাজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

রেলের তরফে দু’বার উদ্বোধনের দিন ঘোষণা হয়েছে। তার পরেও আজ, শুক্রবার রেল ওই সেতুর উদ্বোধন করবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। জানা গিয়েছে, সেতু উদ্বোধনের জন্য রেল বোর্ডের অনুমোদন পায়নি পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা আসেনি বর্ধমান স্টেশন কর্তৃপক্ষর কাছেও। পূর্ব রেলের জনসংযোগ বিভাগের এক আধিকারিকের দাবি, “সেতু নির্মাণকারী সংস্থা এখনও স্বাস্থ্য পরীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়নি। ফলে রেল বোর্ড এখনও ওই সেতু উদ্বোধনে অনুমোদন দেয়নি।’’

সেতু নির্মাণকারী সংস্থা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) গত ২৩ সেপ্টেম্বর রেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানায়, এখনও কী কী কাজ বাকি আছে সেতুতে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার আশ্বাসও দেওয়া হয়। রাজ্যের তরফে ওই উড়ালপুলের উদ্বোধনের পরে পূর্ব রেলের তরফেও জানানো হয়, সোমবার রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ওই সেতুর উদ্বোধন করবেন। বুধবার দুপুরে উদ্বোধনের তারিখ এগিয়ে এনে জেলাশাসককে লিখিত ভাবে শুক্রবার উদ্বোধনের কথা জানায় রেল। প্রশ্ন উঠছে, রেল বোর্ডের অনুমোদন, সেতুর স্বাস্থ্য-পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া কী ভাবে পরপর দু’বার সেতু উদ্বোধন করার কথা ঘোষণা করল পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন। রেলের তরফে অবশ্য কোনও জবাব মেলেনি।

রেল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে রেল বাজেটে এই প্রকল্পে অনুমোদন পায়। যদিও নানা জটিলতায় কথা এগোয়নি। ২০১২ সালের প্রথম দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধাঁচে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের উপরে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে সংযোগকারী রাস্তার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ-চুক্তি হয় রেলের। সেতুর উদ্বোধনে এসে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন ছিল। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি এই উড়ালপুলের নকশা পছন্দ করেছিলেন।’’ এখানেই আপত্তি সিপিএমের। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি উদয় সরকার থেকে প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল ইসলামেরা বলেন, “রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ও বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে ওই সেতুর পরিকল্পনা করে রেলের কাছে দরবার করেছিলেন প্রয়াত নিরুপম সেন। প্রথমে রেলমন্ত্রী, পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই সেতু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামান্য উদ্যোগী হলেও নিরুপমদা জীবদ্দশায় সেতু দেখে যেতে পারতেন।’’

সিপিএমের দাবি, ২০০৯ সালে রেলবোর্ড প্রকল্প বাতিল করে দিচ্ছিল। তখন বিডিএ, পুরসভা ও জেলা পরিষদ একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিল্পমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর চেম্বারে একের পর এক বৈঠকের পরে প্রকল্প বজায় থাকে। উদয়বাবুর দাবি, “এই সেতুকে ঘিরে বৃহত্তর বর্ধমান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিডিএ-তে যার নকশা এখনও রয়েছে।’’ সাইদুল ইসলামের কথায়, “রেল এক প্রকার জোর করেই ২০১২ সালে মূল সেতু তৈরির কাজে হাত দেয়। চাপে পড়ে রাজ্য সরকার সংযোগকারী রাস্তার জন্যে মৌ-চুক্তি করতে বাধ্য হয়।’’

সিপিএমের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “সাইদুল ইসলাম ওই সেতুর জন্যে দাবি করতেন। আর দিদি ভুলেই গিয়েছেন, উনি কখন রেলমন্ত্রী ছিলেন!” বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীরও দাবি, “কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরেই ওই সেতুর কাজে গতি পেয়েছে।’’

বর্ধমানের সাধারণ মানুষের অবশ্য তরজায় আগ্রহ নেই। বরং তাঁরা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব সেতুটিকে সবার জন্যে খুলে দেওয়া হোক। তবে কবে থেকে সেতু পুরোপুরি খুলবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রেলের তরফে কোনও জবাব মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Railbridge Bardhaman RVNL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE