‘গুপিবাঘা ড্রামা ইনস্টিটিউট’ আয়োজিত এই থিম নিয়েই তৈরি হয়েছে চাপানউতোর। নিজস্ব চিত্র
থিম, ‘পাগলা গারদ’। মাইকে প্রচার, ‘আসুন, দেখে যান, নানা ধরনের পাগল। খাঁচার মধ্যে রাখা আছে পাগল...’! আয়োজক, দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকার ‘গুপিবাঘা ড্রামা ইনস্টিটিউট’। নকল গারদের ভিতরে ‘সাজানো’ মানসিক রোগীরা। কুড়ি টাকা টিকিট কেটে সেই ‘রোগীদের’ দেখতে ঢল নামছে দুর্গাপুর পুরসভার তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক মেলা ও কল্পতরু উৎসবে। এমন ‘থিম’ নিয়েই আপত্তি জানিয়েছেন সমাজকর্মীদের একাংশ। তবে আয়োজকদের দাবি, মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা-প্রচারই তাঁদের উদ্দেশ্য।
এই মেলা শুরু হয়েছে ১ জানুয়ারি থেকে। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় চারশোরও বেশি স্টল রয়েছে। সেখানেই একটি স্টল ‘গুপিবাঘা ড্রামা ইনস্টিটিউট’-এর। তাদের থিম ‘পাগলা গারদ’। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গারদের ওপারে বিশেষ পোশাক পরা তেরো জন নাট্যকর্মী। দর্শকদের আকর্ষণ করতে কেউ নানারকম অঙ্গভঙ্গি করছেন। কেউ বা আবার পাথর ছোড়ার ‘অভিনয়’ করছেন। শিশুদের নিয়ে এ সব দেখছেন অনেককেই। চলেছে মোবাইলে দেদার ছবি তোলাও।
কী ভাবে এই ‘পাগলামি’, তারও বর্ণনা দিতে চেয়েছে সংস্থাটি। যেমন, এক কিশোরী স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু বাড়ির লোকজন তাকে গৃহবন্দি করে রাখায় পাগল হয়েছে সে। আবার বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে পাগল হয়েছেন। এমনই নানা ‘দৃশ্য’ ফুটিয়ে তুলছেন অভিনেতারা।
এই ‘থিম’ নিয়েই আপত্তি জানিয়েছেন সমাজকর্মীরা। যদিও নাট্য সংস্থার তরফে শীর্ষেন্দু সরকারের বক্তব্য, ‘‘যাত্রা, নাটক ক্রমশ রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হচ্ছে। শিল্পকে বাঁচাতে নাট্যদলের সবাই এমন একটা পথ বাছছেন। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষকে সামাজিক বিষয়ে আকৃষ্ট করতে ও শিল্পীদের রোজগারের দিশা দেখাতেই এমন ‘থিম’।’’ তবে এমন ‘থিম’ নিয়ে আপত্তিও যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তা-ও স্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সর্বোপরি আমাদের উদ্দেশ্য, মানসিক রোগ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা।’’
মেলার উদ্বোধনের দিনে নাট্যদলের অভিনয় দেখেন পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কাল্পনিক পাগলা গারদ বানিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে নাট্যশিল্পীরা মানসিক অবসাদ দূরে সরানোর বার্তা প্রাচার করছেন।’’
এর আগে নদিয়ার ধুবুলিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটেও এমন ‘থিম’ হাজির করা হয়েছিল। তখনও তৈরি হয় চাপানউতোর। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য রায় জানান, এমন উপস্থাপনার দু’টি দিক। ‘পরিচালনার’ উপরে নির্ভর করে, সেই উপস্থাপনা দর্শকের মনে খারাপ প্রভাব ফেলছে না কি মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। যদিও সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় মনে করেন, ‘‘উদ্যোক্তাদের মানসিক হাসপাতালে এসে প্রকৃত ছবিটা বুঝতে হবে।’’ পাশাপাশি, যাঁরা এই ‘থিম’ টিকিট কেটে দেখেছেন, তাঁদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘মনে রাখা দরকার, স্বাভাবিকত্বও একটি আপেক্ষিক অবস্থা। তার উপরে নির্ভর করে কাউকে অস্বাভাবিক বলা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy