Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Serial Killer

‘চেন খুনি’র কড়া সাজা চান বাকি আক্রান্তেরাও

‘চেন-খুনি’ কামরুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে যে গোটা পনেরো খুন বা খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছিল, তার মধ্যে শেষ ঘটনাটি ঘটেছিল কালনার সিঙেরকোনে, গত বছর ৩০ মে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে দুপুরে বা বিকেলে হাজির হয়েছিল আততায়ী। তার পরে বাড়িতে একা থাকার সুযোগ নিয়ে আচমকাই গলায় পেঁচিয়ে ধরেছিল লোহার চেন। কালনা মহকুমার নানা প্রান্তে এমন ঘটনার শিকার হয়েছিলেন বেশ কিছু মহিলা। নিহত হন কয়েকজন। বাকিরা কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। এই ঘটনাগুলিতে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকারকে সোমবার কালনা আদালত একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। অন্য মামলাগুলিতেও বিচার করে কড়া সাজা দেওয়া হোক, দাবি ‘চেন-খুনি’র হাতে আক্রান্তদের পরিবারের।

‘চেন-খুনি’ কামরুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে যে গোটা পনেরো খুন বা খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছিল, তার মধ্যে শেষ ঘটনাটি ঘটেছিল কালনার সিঙেরকোনে, গত বছর ৩০ মে। সেই মামলাতেই তার ফাঁসির সাজা হয়েছে কালনা আদালতে। প্রথমেই এই মামলাটির রায় হল কেন? আইনজীবীদের দাবি, নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতন চালিয়ে খুনের এই মামলায় ‘পকসো’ ধারা যোগ করা হয়েছিল। এই ধরনের মামলায় ৩০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা, এক বছরের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা। ‘পকসো’ ধারা থাকার কারণেই এই মামলাটি আদালত প্রথম গ্রহণ করে বলে দাবি কামরুজ্জামানের আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ীর।

২০১৯-এর ১ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিলেন হাটকালনা পঞ্চায়েতের রংপাড়ার এক বধূ। কামরুজ্জামান ধরা পড়ার পরে টি-আই প্যারেডে তাকে চিহ্নিতও করেন তিনি। মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে বসে ওই বধূ বলেন, ‘‘সে দিনের ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠি। লোকটা বাড়িতে মিটার দেখার নাম করে ঢুকে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করেছিল। কোনও রকমে প্রাণে বাঁচি। শুরু থেকেই ওর ফাঁসি চাইছিলাম। একটি মামলায় হয়েছে। অন্য মামলাগুলিতেও কড়া সাজা চাইছি।’’

কালনার উপলতি গ্রামের প্রায় বছর চুয়াত্তরের এক মহিলা ‘চেন-খুনি’র হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ দিন ধাত্রীগ্রামে মেয়ের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে একা ছিলাম। লোকটা মিটার দেখার নাম করে ঢুকে হঠাৎ গলায় চেন পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করে। কোনও রকমে বেঁচে গেলেও হাতের চুড়ি ও আংটি খোয়া গেছিল। এ রকম জঘন্য কাজ যে করে, তার কঠিন সাজার প্রার্থনা করছি।’’ তাঁর মেয়ে জানান, ওই ঘটনার পরে তাঁর বৃদ্ধা মা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।

হাটকালনা পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুন করা হয় এক মহিলাকে। তাঁর উপরেও যৌন নির্যাতন চালানোর প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। মৃতার মা এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ে ও ভাবে খুন হওয়ার পরে সংসারটা তছনছ হয়ে যায়। দুই নাতির মধ্যে এক জনকে আমার কাছে রেখেছে। যে আমাদের এত বড় সর্বনাশ করল, সে যেন কোনও মামলা থেকে খালাস না হতে পারে।’’ ২০১৩ সালে মন্তেশ্বরে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুন করা হয় এক বৃদ্ধাকে। দুর্গাপুর থেকে ফোনে এ দিন তাঁর ছেলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ ধরনের অপরাধীদের বেঁচে থাকা মানে সমাজের ক্ষতি। কড়া সাজা হোক ওর।’’

‘চেন-খুনি’র আটটি মামলায় কালনা আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন সৌম্যজিৎ রাহা। তিনি দাবি করেন, ‘‘লকডাউন না হলে আরও দু’টি মামলার শুনানি-পর্ব শুরু হয়ে যেত। প্রতিটি মামলাই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Serial Killer Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy