দুর্গাপুরের নিহত কয়লা কারবারি রাজেশ ঝা ওরফে রাজু। ফাইল ছবি।
প্রকাশ্য রাজনীতিতে কোনও দিনই সে ভাবে দেখা যায়নি দুর্গাপুরের নিহত কয়লা কারবারি রাজেশ ঝা ওরফে রাজুকে। তবে বিধানসভা ভোটের আগে, ২০২০-র ডিসেম্বরে বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, তৎকালীন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ, পরে বিজেপির বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের উপস্থিতিতে পদ্ম-পতাকা তুলে দেওয়া হয় রাজুর হাতে। এই যোগাদানের নেপথ্যে রাজুর প্রান্তিক মানুষের একাংশের মধ্যে প্রভাব, বাহু ও অর্থ বল কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ছিল কি না, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মধ্যে। পাশাপাশি, জেলার রাজনীতিতে এ-ও চর্চা, রাজুর মৃত্যুর পরে বিজেপির পশ্চিম বর্ধমানে কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না। যদিও, বিজেপি দু’টি তত্ত্বই স্বীকার করেননি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, অন্ডাল এলাকায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে রাজুর ব্যক্তিগত পরিচিতি এবং প্রভাব ছিল। বিষয়টি টের পাওয়া যায় রাজুর বিজেপিতে যোগদানের দিনেও। সে দিন ‘আমরা রাজুদাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টার হাতে বিভিন্ন এলাকার বস্তি থেকে অনেকেই যোগদান সভায় এসেছিলেন। রানিগঞ্জের যে ৬-৭ নম্বর কলোনি এলাকায় তাঁর ছোটবেলা কেটেছে, সেখানেও রাজুর প্রভাব ছিল। সেখানকার এক জন বলেনও, “কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে মেয়ের বিয়ে, কারও চিকিৎসা বা অন্য কোনও বিপদে দাদা পাশে থাকতেন।” রাজুর এই ‘প্রভাব’ ভোট-বাক্সের পক্ষে সহায়ক হতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের লোকজনের একাংশ, মত একটি সূত্রের। যদিও বিজেপি তা মানেনি। এ দিকে, জেলার রাজনীতিতে শোনা যায়, যে কোনও ভোটে অর্থ, লোক ও বাহুবলের জন্য এই কয়লা কারবারিদের ‘গুরুত্ব’ থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। সে সূত্রেই রাজুকে দলে নিয়েছিল কি না বিজেপি, সে প্রশ্নও উঠেছে।
এ হেন পরিস্থিতিতে দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। রাজুর মৃত্যুর ফলে এই এলাকার ভোটে আদৌ কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। যদিও, বিধায়ক তথা বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণের দাবি, “এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা। রাজু খুন হওয়ায় আমরা মর্মাহত।” তাঁর সংযোজন: “তবে এ জন্য দলের ক্ষতি হবে না কোনও। কারণ, ২০২০-তে উনি যোগ দেওয়ার পরেই গ্রেফতার হয়ে যান। বিধানসভা ভোটের পরে মুক্ত হন। তার পরেও আমাদের ফল ভালই হয়েছে। অতএব, বোঝাই যাচ্ছে ভোটের সঙ্গে ওঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। পঞ্চায়েতেও কিছু ক্ষতি হবে না।”ঘটনাচক্রে, দিলীপ ঘোষও দাবি করেছিলেন, “সে সময়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রাজুও ছিলেন। কে চোর, কে ডাকাত সব সময়ে তার খোঁজরাখা যায় না।”
তবে, বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে এই ঘটনার ফলে, তাঁদের নেতা-কর্মীরা যে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত, তা স্বীকার করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর নাম না করে রাজুকে ‘বিজেপি কর্মী’ হিসাবেই উল্লেখ করেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর বক্তব্য, “প্রকাশ্যে বিজেপি কর্মীকে খুন করা হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে বসে আছেন।” তৃণমূলের কটাক্ষ, বিজেপির এক-এক জন নেতা রাজু নিয়ে এক-এক রকম কথা বলছেন। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “রাজু ঝা অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন তিনি খুন হওয়ার পরে অপরাধ জগতের সঙ্গে বিজেপির ওঠাবসাটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। তাই বিজেপি নেতারা যেমন খুশি বলে চলেছেন।” যদিও তৃণমূলের বক্তব্যে আমল দেয়নি বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy