Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

কেউ উদাস বসে চেয়ারে, কারও বাগানে পায়চারি

ভোট পেরোনোর পরে মাস পেরোতে চলল। মানুষের রায় ইভিএমে বন্দি হওয়ার পরেই এক জন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাপনায়। আর এক জন আবার বেরিয়েছিলেন ভ্রমণে। কিন্তু সে সবও মিটে গিয়েছে। তবে ফল বেরোতে এখনও বাকি বেশ কয়েক দিন।

বাড়ির বাগানে অপূর্ব মুখোপাধ্যায়।

বাড়ির বাগানে অপূর্ব মুখোপাধ্যায়।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:২৯
Share: Save:

ভোট পেরোনোর পরে মাস পেরোতে চলল। মানুষের রায় ইভিএমে বন্দি হওয়ার পরেই এক জন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাপনায়। আর এক জন আবার বেরিয়েছিলেন ভ্রমণে। কিন্তু সে সবও মিটে গিয়েছে। তবে ফল বেরোতে এখনও বাকি বেশ কয়েক দিন। বাইরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বুকের ভেতরে যে ধুকপুকুনিটা যে থামছে না, দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের সঙ্গে কথা বললেই তা পরিষ্কার।

ভোটের ঠিক দশ দিনের মাথায় তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ববাবুর মেয়ের বিয়ে ছিল। সে কারণে ভোট শেষের পরে চুলচেরা হিসেব কষার সুযোগ পাননি। রাত-দিন এক করে বিয়ের আয়োজনে নেমেছিলেন শহরের মেয়র তথা বিদায়ী বিধায়ক। কিন্তু ২৫ এপ্রিল সে সব চুকে যাওয়ার পর থেকে দুশ্চিন্তাটা চেপে বসছে। মেয়রের অনুগামীরা জানাচ্ছেন, মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে পুরসভার কাজে ডুবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অপূর্ববাবু। সেই মতো কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়রের চেয়ারে বসেও কেমন যেন অস্থিরমতি মনে হচ্ছে অপুদাকে, বলছেন ঘনিষ্ঠরাই। তাঁদের দাবি, কয়েকটি এলাকা থেকে আশানুরূপ ‘লিড’ হবে কি না, সে নিয়ে সংশয়টা যেন কাটছে না নেতার।

যদিও বাইরে থেকে অপূর্ববাবুকে দেখে এ কথা বোঝার উপায় নেই। সকালে নিয়ম করে বৈঠকখানায় বসছেন। প্রয়োজনে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তার ফাঁকেই বাগানে পায়চারি, গাছের পরিচর্যা করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত বলে দাবি করার পরেই অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি হারের স্বাদ আগে পেয়েছি। আবার জয়েরও। তাই যা হবে তা মানতে আমার অসুবিধে হওয়ার কথা নয়!’’ কথা বলার ফাঁকে অন্যমনস্কও হয়ে পড়ছেন।

মেয়ের কাছে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে শিখেছিলেন। অনভ্যাসে অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছেন। ‘‘দূর! কিছুতেই শাট ডাউন হতে চায় না’’— সশব্দে বন্ধ করে সরিয়ে রাখছেন দূরে। ভোটের ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা সব গোলমাল করে দিচ্ছে? হেসে ফেলেন শহরের দু’বারের বিধায়ক।

বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বিশ্বনাথবাবু ভোট মিটতেই ছুটেছিলেন উজ্জয়িনী। ‘টেনশন’ থেকে দূরে থাকতে? মানতে নারাজ ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নেতা। প্রার্থী হওয়ার পরে জোরকদমে প্রচার করেছেন। ভোটের দিনও বুথে-বুথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁদর দলেরই একটি অংশের দাবি, হিসেব-নিকেশ করার পরে আর ততটা স্বস্তিতে নেই বিশুদা। বামেদের সব ভোট পেয়েছেন তিনি কি না, নিজের এলাকা বাদে অন্যত্র তৃণমূলের ভোট কতটা নিজের দিকে টানতে পেরেছেন, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে দাবি বিশ্বনাথবাবুরই এক অনুগামীর।

উজ্জয়িনী যাওয়া বাদ দিলে অবশ্য তাঁর রুটিনে তেমন কোনও বদল হয়নি। সকাল থেকে দলের কাজে বেরিয়ে পড়ছেন। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী রাজ্যে প্রচারে এসে যত বার অন্ডাল বিমানবন্দরে নেমেছেন, দেখা করতে গিয়েছেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে অসুস্থ বাবাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন। ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে? বারান্দায় রাখা কুঁজো থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা জল গলায় ঢেলে কংগ্রেস প্রার্থী বললেন, ‘‘দুশ্চিন্তা আমার কেন হবে? যার হওয়ার তার হচ্ছে!’’

সত্যিই কি এতটা নিশ্চিন্তে রয়েছেন বিশ্বনাথবাবু? পরিবারের লোকেরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁরা জানান, বাড়ি ফিরে চেয়ারে ঠেস দিয়ে মাঝে-মাঝে উদাস হয়ে বসে থাকছেন। ফল নিয়ে কোনও আশঙ্কায়? জবাব দেন না প্রার্থী। তবে তাঁর স্ত্রী রুমাদেবী বলেন, ‘‘টেনশন একটু হচ্ছে বৈকি। ১৯ মে পার হলে বাঁচি।’’

ছবি: বিকাশ মশান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy