E-Paper

৪২-এর ছ্যাঁকায় কাহিল প্রাণ

বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর ডি এন দাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গরমের যা পরিস্থিতি তাতে হয়তো ছুটি ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।

people of Bardhaman and Katwa drinking lassi to keep themselves cool

তেষ্টা মেটাতে চুমুক লস্যি, ডাবের জলে। বর্ধমান ও কাটোয়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৪
Share
Save

তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪২ ডিগ্রি। সঙ্গে গরম হাওয়া। সকাল ১০টা বাজলেই বাইরে বার হওয়া বেশ কঠিন। অন্য দিন স্কুল, কলেজ, কাজের জন্য বেরোতে হলেও রবিবার কার্যত সুনসান ছিল জেলার বেশির ভাগ এলাকা। একনজরে রাস্তা দেখলে মনে হচ্ছিল যেন বা ফিরেছে লকডাউনের সেই সময়। এর মধ্যেই তাপপ্রবাহের কারণে রাজ্য সরকারের তরফে আজ সোমবার থেকে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যদিও ছুটির জেরে পঠন প্রক্রিয়া ব্যহত হবে কি না, পাঠ্যক্রম শেষ হবে কি না, দীর্ঘ অনভ্যাসেরলপরে যে স্কুল যাওয়ার অভ্যাস ফিরেছিল তাতে আবার ঘাটতি দেখা দেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষক, অভিভাবকদের একাংশ পড়ুয়াদের সুস্থ থাকায় জোর দিচ্ছেন। আবার অনেকে চিন্তিত ভবিষ্যত নিয়ে।

বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর ডি এন দাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গরমের যা পরিস্থিতি তাতে হয়তো ছুটি ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গরম বাড়লে ছুটি বাড়তেও পারে। এই পরিস্থিতিতে মে মাসের নির্ধারিত গরমের ছুটি আবার দেওয়া হবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।’’ তাঁর দাবি, এই পরিস্থিতিতে স্পেশাল ক্লাসের উপরে ভরসা রাখতে হবে। গরম কমে গেলে শনিবার পুরো ক্লাস করা বা রবিবার ঘণ্টা দুয়েক স্কুল করানো যেতে পারে। স্কুল শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলে এই ধরনের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু ভাবা যেতে পারে। বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষক প্রতনু রক্ষিত বলেন, ‘‘কোভিডের সময় থেকেই পড়াশোনায় একটি খামতি চলছে। খামতি মেটাতে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের বড় ভূমিকা নিতে হবে।’’

কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষের মতেও গরম বাড়ছে। ফলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে একেবারে স্কুল ছুটি দেওয়ার বিষয়টিতে ব্যক্তিগত ভাবে সমর্থন নেই তাঁর। তাঁর দাবি, প্রয়োজনে ক্লাসের সময় কিছুটা কমিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত স্কুল রাখা যেত। স্কুল বন্ধ থাকলে ছাত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক, গাছমাস্টার হিসাবে পরিচিত অরূপ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘তাপপ্রবাহের তীব্রতার নিরিখে সরকারি সিদ্ধান্তের কার্যকরী বিকল্প আমার জানা নেই। তবে ছুটির সীমা ঘন ঘন আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের উপরে নির্ধারিত হোক। কারণ করোনার ক্ষতিপূরণের লড়াই এখনও শেষ হয়নি আমাদের।’’ সোমবার থেকে অনেক স্কুলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। পিছিয়ে গেল তাও। কালনা শ্রীশ্রী নিগমানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবকুমার শর্মা বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ না রেখে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্লাস করানো যেত।’’

শিক্ষকদের একাংশের আবার দাবি, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়ার বিষয়টি নতুন নয়। আগেও এমন পরিস্থিতিতে সকালে স্কুল হয়েছে। দূরে থাকা শিক্ষকদের পৌঁছতে অসুবিধা হলেও এখন বদলি পেয়ে বেশির ভাগ শিক্ষকই বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে এসেছেন। ফলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কালনা শহরের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাহিন শেখ, কালনা ২ ব্লকের এক অভিভাবক আফসার মোল্লারাও বলেন, ‘‘সকালে স্কুল হলেই ভাল হত।’’

অনেক অভিভাবকের আবার দাবি, এমনিতেই নানা ভাইরাসে জ্বর, সর্দিতে ভুগছে ছেলেমেয়েরা। গরমে স্কুল যাওয়া-আসা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপদ বাড়বে। কাটোয়ার এক অভিভাবক দীপঙ্কর দেবনাথ বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলগুলিতেও ছুটি দেওয়া জরুরি। ছোটরা এবং বয়স্কেরা প্রায় সব বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রয়োজনে কোভিড পরিস্থিতির মতো অনলাইনে পড়া করা যেতে পারে।’’

এ দিন দুপুরে কালনার এসটিকেকে রোড, কালনা-বর্ধমান রোড, পাণ্ডুয়া রোডে যানবাহন চলাচল করেছে অনেক কম। বহু দোকানের দরজাও অর্ধেক নামানো ছিল। জরুরি প্রয়োজনে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদেরও মুখ কাপড়ে, চোখ রোদচশমায়, মাথা ছাতায় ঢাকা ছিল। কালনা ২ ব্লক থেকে শহরে ইদের বাজার করতে এসেছিলেন আসগর মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘বাইকে খুব কষ্ট হচ্ছে। গরম হাওয়ায় শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সামনে ইদ। শুনছি তাপ আরও বাড়বে। তাই ঝুঁকি নিয়েই জিনিস কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’’ খেতমজুরেরাও কয়েক বোতল জল নিয়ে পাট, আনাজের জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন। ১২টা বাজলেই মাঠও অবশ্য ফাঁকা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heatwave loo Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।