কালনার তাসলিমা খাতুন। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
বাইশ বছর বয়সে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। তখন তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কালনা ২ ব্লকের অর্জুনা গ্রামে বাপেরবাড়িতে ফিরেও স্বস্তি পাননি। এক দিকে, স্বাবলম্বী হওয়া, সন্তানকে বড় করা। তার সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা। জীবনযুদ্ধ আর আইনি লড়াই দু’হাতে লড়ে গিয়েছেন তাসলিমা খাতুন। হাজার দুয়েক টাকা আর আধ ভাঙা সাইকেল সম্বল করে যে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আট বছরে তা অনেকটাই থিতু। ঘর করেছেন, গাড়ি কিনেছেন বছর তিরিশের তাসলিমা। তবে ভাঙা সাইকেলটি আজও সঙ্গী প্রত্যন্ত গ্রামের রক্ষণশীল পরিবারের এই মেয়ের।
যাত্রা শুরু হয়েছিল সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শস্য, আনাজ-সহ নানা সামগ্রী সংগ্রহ করা অল্প লাভে মহাজনদের কাছে বিক্রি করা দিয়ে। কিছু দিনে লাভের টাকায় একটি মোটরবাইক কিনে ফেলেন তসলিমা। তাতেই চলে কেনাবেচা। এখানেই থেমে থাকেননি। এর পর একটি গাড়ি কিনে, চালানো শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্সও করান। তাঁর কথায়, “এখন রোজ ভোরে বেরিয়ে সাইকেলে পাড়ায় পাড়ায় ফসল ও নানা সামগ্রী কিনি। ৮-১০ কুইন্টাল হলে গাড়িতে চাপিয়ে কেজি প্রতি দেড়, দু’টাকা লাভে কালনা, পাণ্ডুয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় মহাজনদের বিক্রি করি। নিজেই চালিয়ে যাই বলে পরিবহণ খরচও বাঁচে।” তাঁর দাবি, মাসে অনায়াসে হাজার দশেক টাকা উপার্জন হয়।
২০১৩ সালে বীরভূমের নলহাটি এলাকায় তসলিমার বিয়ে হয়। তবে তা বেশি দিন টেকেনি। বাপের বাড়ি ফিরে ধীরে ধীরে রোজগার শুরু করেন। তিনি বলেন, “শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চাননি আমার সন্তান ভূমিষ্ট হোক। প্রথম দিকে কামাইয়ের একটা বড় অংশ চলে যেত মামলায়। পরে সরকারি ঘর পাই। এখন সেখানেই আট বছরের ছেলে শেখ নুরুল ইসলামকে নিয়ে থাকি। এখন আমার একটাই ইচ্ছে, মা-ছেলের জন্য একটা বড় বাড়ি করব।”
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, “তাসলিমা এক দারুণ সাহসী এবং পরিশ্রমী মেয়ে। তাঁর দীর্ঘ দিনের এই লড়াই আমরা দেখেছি। ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ও একাই যে ভাবে ধীরে ধীরে এগিয়েছে, আমাদের গর্ব হয়। ওর লড়াই আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy