এক দিকে বেশির ভাগ জমিতে সেচের ব্যবস্থা নেই। অন্য দিকে, বৃষ্টির ঘাটতি। এই জোড়া কারণে, গত বছরের মতো এই বছরও পশ্চিম বর্ধমানে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলেই কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কৃষি দফতরের হিসাবে, জেলায় প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। গত দু’বছর ধরে ছবিটা পাল্টে যাচ্ছে। গত বছর মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। এ বার সেটা ২৫ হাজার হেক্টর।
কৃষি দফতরের ব্যাখ্যা, এই পরিস্থিতির মূল কারণ বৃষ্টির ঘাটতি। জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে অগস্টের শেষ পর্যন্ত আমন ধান রোপণ করা হয়। এই বছর ওই সময়ে জেলায় ৬৭২ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। আবার জেলায় সেচযুক্ত জমি রয়েছে মোটে ন’হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ডিভিসির সেচখালের জল পাওয়া যায় কাঁকসা ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি পুকুর, কুয়ো থেকে ও সাবমার্সিবলের সাহায্যেও সেচের জল মেলে। আবার, বারাবনি, পাণ্ডবেশ্বর, সালানপুর, অন্ডালের চাষিদের অনেকেই ধান চাষ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কারণ, এই সব এলাকায় ধান চাষ তাঁদের উপার্জনের একমাত্র পথ নয়।
তবে, আমনের ফাঁকা জমিতে বিকল্প হিসেবে ডালশস্যের চাষ করা হচ্ছে বলে দফতর জানিয়েছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে মুসুর, ছোলা, কালো কলাইয়ের চাষ হচ্ছে। মুসুর ও ছোলা প্রায় দু’হাজার এবং কালো কলাই বা বিউলির চাষ হচ্ছে প্রায় পাঁচশো একর জমিতে।
কিন্তু কেন ডালশস্য? দফতর সূত্রে দাবি, জেলার বেশির ভাগ জমিতে জল ঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ডালশস্য চাষে সে ভাবে জল লাগে না। এক বার বৃষ্টি হলেই মাটিতে যে আর্দ্রতা থাকে, তাতেই ডালশস্যের চাষ করা যায়। তা ছাড়া, ডালশস্য চাষে খরচ খুব কম। এক একর জমিতে খরচ হয় ছয়-সাত হাজার টাকা। আর এক একরে ফলন হয় প্রায় চার কুইন্টাল, যা বিক্রি করে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন চাষিরা। পাণ্ডবেশ্বরের সুদিন ঘোষ, বারাবনির সাধন মণ্ডলদের মতো কয়েক জন চাষি বলেন, “আমাদের এখানে আমন ধানের চাষ করা যায়নি। ডালশস্য চাষ করে গত বছরেও উপার্জন হয়েছিল। এ বারেও তাই করছি।”
কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা জাহিরউদ্দিন খান বলেন, “বিকল্প চাষ হিসেবে ডালশস্য অনেকটাই লাভজনক। যেহেতু এই ধরনের চাষে জল কম লাগে, তাই আমাদের জেলার চাষিদের জন্য খুবই সুবিধার।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)