কুলিধাওড়া বস্তি। ছবি: পাপন চৌধুরী।
পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, নিকাশি, পানীয়জল, স্কুল-সহ সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক ভাতা— সব কিছুই থেকে তাঁরা বঞ্চিত। এই আক্ষেপ সালানপুর ব্লকের বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতের শিবদাসপুর, কুলিধাওড়া বস্তিবাসীর। ভোটের মুখে বস্তিবাসীর এই সব সমস্যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বলে জানালেন বাসিন্দারা। তবে তাঁদের মূল আর্জি, মাথার উপর শক্তপোক্ত ছাদ প্রয়োজন।
দেন্দুয়া লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে বনজেমাহারি কোলিয়ারিকে বাঁ হাতে রেখে, মেঠো পথে প্রায় তিন কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই নজরে আসবে শিবদাসপুর বস্তি। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, শতছিদ্র ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া একফালি একটি ঝুপড়ি ঘরের সামনের উঠোনে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন রাহুল ভুইঁয়া। গলা শুনে তাঁর প্রথম প্রশ্ন, কোন দল থেকে আসা হয়েছে? উত্তরের অপেক্ষা না করে চেয়ে বসলেন একটা নতুন ত্রিপল। খানিক পরে বোঝা গেল, তাঁর দৃষ্টিশক্তি নেই। আগন্তুক কোনও দলের লোক নয় শুনে, ভুল শুধরে তিনি জানালেন, আসলে দোড়গড়ায় ভোট। রাজনৈতিক নেতারা ভোট চাইতে আসছেন। বর্ষার মুখে তাই সবার কাছেই একটা ত্রিপল চাইছেন। রাহুল বলেন, “প্রতি মাসে হাজার টাকা ভাতা পাই। কিন্তু বর্ষায় ত্রিপল চুঁইয়ে জল পড়ে। অনেকবার বলেছি। কেউ কোনও উপায় করে দিচ্ছেন না।”
রাহুল একাই নন। এলাকায় প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করছেন, লক্ষ্মী সাও। ছোটো একটা গুমটির আয়ে সংসার চলে। মাটির দেওয়াল আর টালির চালের দু’কামরা ঘরে স্বামী, ছেলে, নাতি-নাতনিকে নিয়ে ভরা সংসার। লক্ষ্মীর অভিযোগ, “আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। কথাই শুনলেন না কেউ।” তাঁর আশঙ্কা, “ঘরটা যে কবে ভেঙে পড়ে, সেই আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়েছে।”
সেখান থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে কুলিধাওড়া বস্তি। সেখানকার বাসিন্দা বিন্দী দেবীর অভিযোগ, “স্বামী মারা গিয়েছেন ১০ বছর আগে। এখনও বিধবা ভাতা পেলাম না। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গিয়ে দু’বার নাম লিখিয়েছি। তাতেও ফল পাইনি।” দু’য়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে আবেদন করেও রেশনকার্ড পাননি বলে দাবি ওই এলাকারই বাসিন্দা রাজ সিংহের।
এ দিকে, বস্তিবাসীর এই সব অভাব-অভিযোগ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতেই এমন কিছু সমস্যা আছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ফাল্গুনী ঘাসি কর্মকার। তাঁর দাবি, “আবাস যোজনার তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রকে পাঠানোর পরেও টাকা আসেনি। তাই বাড়ি করা যায়নি। আর বিভিন্ন ভাতা দেওয়া ক্ষেত্রে প্রাপকদের একটি অংশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। অনেকের ব্যাঙ্ক একাউন্টই নেই। তাই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। নতুন বোর্ড তৈরি হওয়ার পরে এই সমস্যাগুলির সুরাহা করা হবে।”
এই দুই বস্তি এলাকা জেলা পরিষদের ১৫ নম্বর আসনের অন্তর্গত। এখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন যথাক্রমে সিপিএমের শিপ্রা মুখোপাধ্যায়, বিজেপির চিন্ময় তিওয়ারি, কংগ্রেসের বরুণ মণ্ডল ও তৃণমূলের মহম্মদ আরমান। ফাল্গুনীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শিপ্রার দাবি, “এই এলাকার উন্নয়নে তৃণমূল কিছুই করেনি।” চিন্ময়ের অভিযোগ, “শাসক দল কাটমানি খেতে ব্যস্ত। উন্নয়নে নজর দেবে কী করে!” বরুণের মন্তব্য, “রাজ্য সরকার পঞ্চায়েতের বস্তি উন্নয়নে যে ব্যর্থ, তা আমরা প্রচারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।” যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে আমল দেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় প্রার্থী আরমান বলেন, “অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিছু কাজ বাকি থাকলে, তা-ও পূরণ করেদেওয়া হবে।” (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy