যে তিন জায়গা হেরিটেজ তালিকায়: (১) সিহারসোল রাজ হাইস্কুল। (২) ভট্টাচার্য কালী মন্দির। (৩) নজরুলের জন্মভিটের ছবি। জন্মভিটেটি বর্তমানে নেই। তবে এই ছবি দেখেই তৈরি হবে সেটির আদল। সূত্র: কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত তিনটি স্থানকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি গত ৭ সেপ্টেম্বর আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীকে চিঠি লিখে জানিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। তিনটি জায়গা হল, নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ায় তাঁর বাসস্থান, সেখানকার ভট্টাচার্য কালী মন্দির এবং রানিগঞ্জের সিহারসোল রাজ হাইস্কুল।
উপাচার্য জানিয়েছেন, দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কবির জন্মভিটেকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তার পরে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চুরুলিয়ায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর, জানিয়েছেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ। তবে, উপাচার্য জানিয়েছেন, কবির জন্মভিটেয় এই মুহূর্তে সাবেক অ্যাকাডেমি ভবন রয়েছে, যা তৈরি করেছিলেন কবির পরিবারের সদস্যেরা। তবে কবির জন্মভিটের পুরনো ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রয়েছে। সেটির সঙ্গে মিলিয়ে ওই ভবনটি ভেঙে পুরনো আদলে মাটি ও খড়ের বাড়িটি ফের তৈরি করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট তিনটি জায়গার বিস্তারিত নথি হেরিটেজ কমিশনকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হেরিটেজ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জায়গাগুলির খতিয়ান, দাগ নম্বর-সহ বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পরেই তিনটি স্থানকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হবে।
ওই তিনটি স্থানই কবির জীবনে বিশেষ ভাবে রেখাপাত করেছিল বলে নজরুল-বিশেষজ্ঞ ও স্মৃতি-লেখকের সূত্রে জানা যায়। এই সূত্রেই ‘কাজী নজরুল ইস্লাম: স্মৃতিকথা’ শীর্ষক বইতে মুজফ্ফর আহমদ জানাচ্ছেন, সিহারসোলের স্কুলে ভর্তির গল্পটি। চিকিৎসক হেরাসতুল্লার কাছ থেকে গল্পটি সংগ্রহ করেছিলেন মুজফ্ফর। জানাচ্ছেন, কোনও এক বন্ধু বা আত্মীয় এই স্কুলে পড়তেন। সেই সূত্রেই নজরুলে এখানে পড়ার ইচ্ছে হয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে কিছু কারণে, ভর্তি হওয়া হবে না বুঝে, সেই বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছে একটি চিঠি লিখে যান নজরুল। সেই বন্ধু বা আত্মীয় চিঠিটি তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে দেখালে ‘পত্রের ভাষা ও মান’ দেখে নজরুলকে ভর্তি করা হয় স্কুলে। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ও তাঁর ‘আমার বন্ধু নজরুল’ শীর্ষক বইয়ে জানাচ্ছেন, এই স্কুলের ‘বোর্ডিং’-এ থাকা নজরুলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের প্রথম দিনগুলির কথা। এই স্কুলেরই শিক্ষক, যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত নিবারণচন্দ্র ঘটকের প্রভাবও যে তাঁর জীবনে পড়েছিল, তা কবি নিজেই একাধিক বার জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, ১৯১৭-র ৮ জানুয়ারি নিবারণচন্দ্রকে ইংরেজ পুলিশ অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করে।
বিশিষ্ট নজরুল গবেষক বাঁধন সেনগুপ্তের মতে, “সিহারসোলের স্কুলে কবি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। দশম শ্রেণির প্রি-টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পরে স্কুল ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। এ ভাবে কবির স্মৃতি সংরক্ষিত হওয়ার খবরটি খুবই আনন্দের।” হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে স্কুল, এই খবরে তাঁরাও ‘অভিভূত’ বলে জানান স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপসচট্টোপাধ্যায়।
পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কালী মন্দিরটির সঙ্গেও জড়িয়ে কবির স্মৃতি, জানাচ্ছেন সেখানকার সেবাইত পরিবারের প্রবীণ সদস্য দয়াময় ভট্টাচার্য। তিনি জানান, তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই আসা-যাওয়া ছিল নজরুলের। কালী পুজোর সময়ে এখানে কবির গান গাওয়ার স্মৃতিও রয়েছে বলে দাবি তাঁর। দয়াময় হেরিটেজ-তকমার কথা শুনে বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে চুরুলিয়ার একটি ‘মক্তব’ এবং পীরপুকুরটিকেও হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy