বর্ধমান সদর ২ ব্লকে সারের গুদামে প্রশাসনের অভিযান। নিজস্ব চিত্র।
সারের কালোবাজারির অভিযোগ উঠছিল। তদন্তও শুরু হয়। অভিযোগ পেয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগে পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তত ৬০ জন সার ব্যবসায়ীকে ‘বাড়তি’ টাকা চাষিদের ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি দফতর। এ দিকে, জেলায় সারের জোগান বাড়াতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতর। একই সঙ্গে বিভিন্ন সার প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করেছে জেলা কৃষি দফতর। বৃহস্পতিবার ভিডিয়ো কনফারেন্স করে কোন ব্লকে কত সারের ঘাটতি রয়েছে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
আলু চাষিদের মূল চাহিদা থাকে ১০:২৬:২৬ সারের দিকে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় ৯ হাজার টনের মতো ১০:২৬:২৬ সার মজুত রয়েছে। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বুধবার রাতে এক রেক (২,৬০০ টন) ১০:২৬:২৬ সার জেলায় পৌঁছেছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে আরও চার রেকে ওই সার ঢুকবে। প্রত্যেকটি রেকেই ২,৬০০-৩,০০০ টন সার থাকবে। ওই সার পৌঁছে গেলে, আলু চাষে সার নিয়ে সমস্যা হবে না।’’
এক কৃষি আধিকারিকের দাবি, একটি সংস্থার চারটি রেক আসার কথা থাকলেও তারা সেপ্টেম্বর মাসে কেবল একটি রেক পাঠিয়েছিল। ফলে, জেলার বহু সমবায়ে সারের সঙ্কট দেখা দেয়। তবে জেলার আলু চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে ১০:২৬:২৬ সারের উপরে ভরসা করায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের দাবি, পটাশের আমদানি কম হওয়ার জন্যেই সারা দেশেই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তার ফল পড়েছে এ জেলাতেও। তবে এখনও পর্যন্ত জেলায় ১,৫০০ টন পটাশ মজুত রয়েছে। আরও এক হাজার টন মিলবে বলে জানানো হয়েছে। তাতে বোরো চাষে চাপান-সার হিসেবে পটাশের ঘাটতি মিটে যাবে বলে কৃষি আধিকারিকদের আশা। ডিএপি সারেরও জোগানেও অসুবিধা হবে না।
এ দিকে, নির্ধারিত মূল্যের থেকে সারের দাম বেশি নিচ্ছে এমন বেশ কিছু অভিযোগ কৃষি দফতরে জমা পড়ে। পুলিশকে নিয়ে কৃষি দফতর তদন্তে নেমে জানতে পারে, ‘ই-পস’ যন্ত্রের নির্ধারিত বিল দেওয়ার পরেও চিরকূট দিয়ে কিংবা প্যাকেট প্রতি তিন-চারশো টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। কৃষি দফতরের দাবি, কালনা ১, জামালপুর, মন্তেশ্বর-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের অন্তত ৬০ জন সার-ব্যবসায়ীকে ‘বাড়তি’ টাকা চাষিদের ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আবার মেমারিতে ভুয়ো অভিযোগ করায় কৃষি দফতরে ডেকে অভিযোগকারীকে ভর্ৎসনাও করেন কৃষি আধিকারিকেরা। দফতরের দাবি, ওই ব্যক্তি ভুল স্বীকার করে মুচলেকাও দিয়ে গিয়েছেন।
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার এ দিন জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তিনি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক কৃষি আধিকারিক ও জামালপুর থানার ওসি গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন সারের দোকানে অভিযান চালান। জামালপুর ২, চকদিঘি ও জাড়গ্রাম অঞ্চলের কয়েকজন চাষি তাঁদের কাছে বেশ কয়েকজন সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ করেন। ওই ব্যবসায়ীদের বেশি দাম ফেরত দিতে বাধ্য করানো হয়। বিডিও বলেন, ‘‘সারের কালোবাজির অভিযোগ অমূলক ছিল না। সারের বেশি দাম নেওয়া ব্যবসায়ীদের ‘শো-কজ়’ করা হয়েছে। তাঁদের জবাব সন্তোষজন না হলে লাইসেন্স ২১ দিনের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’ জেলার সার ব্যবসায়ীদের তরফে শিবনাথ দাঁ দাবি করেন, ‘‘জেলায় সার অপ্রতুল হওয়ায় ব্যবসায়ীদের নিজেদের খরচে বাইরের জেলা থেকেও আনাতে হচ্ছে। আবার কিছু কোম্পানি সারের সঙ্গে অণু-খাদ্য নিতেও বাধ্য করছে। কিন্তু চাষিরা অণু-খাদ্য নিতে চাইছেন না। সে সব কারণে বিক্রির সময়ে সারের দাম
কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে।’’
জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের পরামর্শ, ‘‘গাছের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশের প্রয়োজন। বেশ কিছু সারেই এই তিন ধরনের উপাদান আছে। আবার কোনও সারে একটি বা দু’টি উপাদান রয়েছে। চাষিরা তাই বিভিন্ন সার মিশিয়েও জমিতে প্রয়োগ করতে পারেন। তা হলে সারের সঙ্কট হবে না।’’ তিনি জানান, জেলায় এ নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। ডিলারদেরও এ ব্যাপারে চাষিদের মধ্যে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy