পাণ্ডবেশ্বরের পাণ্ডব মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা জুড়ে বালি। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারের খাতায় পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় বৈধ বালি ঘাট একটিও নেই। কিন্তু এলাকাবাসীর বড় অংশেরই অভিযোগ, অবৈধ ভাবে বালি কাটা হচ্ছে। আর সেই বালি পরিবহণের জেরে রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়েছে, জেলায় ১১টি বালি ঘাটে বালি খননের অনুমতি দেওয়া আছে। এর মধ্যে কাঁকসায় দু’টি, জামুড়িয়ায় পাঁচটি, বারাবনি ও অন্ডালে একটি করে এবং সালানপুরে দু’টি বৈধ ঘাট রয়েছে। এ ছাড়া, ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ট্রেডিং এজেন্সি রানিগঞ্জের তিরাটে দামোদর নদের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন মতো বালি তোলার অনুমতি দিয়েছে।
কিন্তু পাণ্ডবেশ্বরে অবৈধ ভাবে বালি কাটার অভিযোগ করছেন বাসিন্দাদের একাংশ। এখানে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পঞ্চপাণ্ডব শিব মন্দির রয়েছে। মন্দির লাগোয়া অজয়ে মকর স্নান এবং চড়ুইভাতি উপলক্ষে জনসমাগম হয়। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অজয় সেতু থেকে পাণ্ডব মন্দিরের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগে ঢালাই রাস্তাও তৈরি করে দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মন্দিরের অদূরে অতীতে ইসিএলের একটি বালি ঘাট ছিল। সেখান থেকেই অবৈধ ভাবে বালি কাটা হচ্ছে। কে বা কারা তা করছে, সেটা ভাঙেননি এলাকাবাসী। তবে, অজয়ের কেন্দ্রা, মাধাইপুর ও গৌরবাজারেও অবৈধ ভাবে বালি কাটার অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, পাণ্ডব মন্দির লাগোয়া এলাকার পুরোটা ও কেন্দ্রায় খনন করা বালির একাংশ ট্রাক্টরের মাধ্যমে পাণ্ডব মন্দির সামনের রাস্তা দিয়েই জাতীয় সড়কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার পরে বীরভূম-সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সাধন দাস, কীর্তন কোটালদের অভিযোগ, “বেপরোয়া গতিতে অতিরিক্ত পরিমাণে বালি বোঝাই করে ট্রাক্টর ছুটছে। এর জেরে রাস্তার অর্ধেক ভেঙে গিয়েছে। রাস্তার অর্ধেক অংশ বালিতে এমন ভাবে ঢেকে গিয়েছে যে, পথ বলেই বোঝা যাচ্ছে না। সে সঙ্গে, যেখানে-সেখান থেকে বালি তুলে নেওয়ায় নদ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।” এমনকি, ২০২২ ও ২০২৩-এ যথাক্রমে পাণ্ডব মন্দির ও লাগোয়া এলাকায় দু’জনের জলে ডুবে মৃত্যুও হয়। দেবীদাস আচার্য, কিশোর চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, মাধাইপুর থেকে কোন্দা হয়ে বালি পাচার হচ্ছে। তার ফলেও রাস্তা খারাপ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা। গোবিন্দপুরের বাসিন্দা সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মাধাইপুর, কোন্দা, গৌরবাজার, এই তিনটি বালিঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি কেটে তা পাচার করা হচ্ছে। এর জেরে মহাল হয়ে পাণ্ডবেশ্বর পর্যন্ত রাস্তায় বালি পড়ে থাকছে। হেঁটে যাতায়াত করাটাও বিপজ্জনক।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের তোপ, “বালি, কয়লা চুরি তৃণমূলের সংস্কৃতি। আর তার জেরে সাধারণ মানুষ ভুগছেন।” বিরোধীদের অভিযোগে আমল দেননি স্থানীয় বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর সংযোজন: “অবৈধ ভাবে বালি কাটা হচ্ছে বলে জানা নেই। প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।”
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের শীর্ষকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক আধিকারিক জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে লিখিত অভিযোগ হয়নি বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy