Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim The Night

‘রাত দখলের নামে মদ্যপান মহিলাদের’! মমতা-অভিষেকের নির্দেশ উড়িয়ে লাগামছাড়া এ বার এক মন্ত্রীও

উদয়ন গুহ থেকে কাঞ্চন মল্লিক, আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী, বিধায়কদের মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল থেকে রাজ্য সরকার। নেতৃত্বের নির্দেশের পরেও সেই ‘কুমন্তব্যের ধারা’ চলছে।

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৩৬
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি ছাড়া রাজ্যের কোনও মন্ত্রী আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করবেন না। বিবৃতিও দেবেন না। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা-ই বলেছেন দলীয় নেতাদের উদ্দেশে। তিনি জানিয়েছিলেন, চিকিৎসক তথা নাগরিক সমাজের আন্দোলন নিয়ে ‘কুমন্তব্য’ করা যাবে না। কিন্তু সেই বার্তার পরোয়া না-করেই মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর দাবি, ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে গিয়ে গভীর রাতে মদের দোকানে যাচ্ছেন মহিলারা। মদ কিনে খাচ্ছেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা করে সতর্ক হতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

সোমবার বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে পূর্ব বর্ধমানের কালনা বাসস্ট্যান্ডে একটি অনুষ্ঠান থেকে স্বপনের মন্তব্য, ‘‘রাত ২টো হোক বা ১১টা, মিছিল করা কিংবা রাত জাগায় অংশ নেওয়ার পরিবেশ বাংলায় আছে বলেই তো মেয়েরা তা করতে পারছেন।’’ মন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন রয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা অর্থাৎ, ফাঁসির দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমিও তাই চাইছি।’’ ‘রাত দখল’ নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্যে অবশ্য সায় দেননি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশের পরেও নেতা-মন্ত্রীদের আলটপকা মন্তব্য কি শাসকদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ করছে?

গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নিয়ে একের পর এক মন্তব্য করে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন শাসকদলের বেশ কয়েক জন নেতা। ‘রাত দখল’ নিয়ে মন্ত্রী উদয়ন গুহের মন্তব্য ছিল, ‘‘দিনহাটার কেউ কেউ রাতের দখল নিতে চাইছেন। আমার সমর্থন থাকল। তবে স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাতে ফোন করবেন না।’’ তার পর অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকার থেকে উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, আরজি কর নিয়ে মুখ খুলে সরকার তথা শাসকদলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন অনেকে। ওই প্রেক্ষাপটে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কড়া বার্তা দেন অভিষেক। তিনি লেখেন, ‘‘চিকিৎসক তথা সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে কোনও কুমন্তব্য নয়। প্রতিবাদ করার অধিকার সকলের রয়েছে।’’ তার পরেও বিতর্কিত মন্তব্যের ধারা অব্যাহত। গত শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ঝড়-জলের মধ্যে আপনারা রাস্তায়। তাই আপনাদের পাহারাদার হিসাবে আমাকে জেগে থাকতে হয়।’’ আর মন্ত্রী স্বপন বললেন,“আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত জাগাতে অংশ নেওয়া মহিলাদের, গভীর রাতে মদের দোকানে মদ খেতে যাওয়া মহিলাদের পাহারা দিতে হচ্ছে আমাদেরই।’’ এখানেই শেষ নয়। মন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘আমার এলাকায় (পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা) দেখেছি একটি দোকানে রাতে মেয়েরা মদ কেনেন। খবরটা পাওয়ার পর আমি দু’দিন পর পর সেখানে রাতে গিয়েছি। কোন মেয়েরা হোটেলে মদ খেতে চায় সেটাও দেখতে। আমি হোটেলওয়ালাকে বলে এসেছি, এখন থেকে আর কোনও মহিলাকে হোটেলে মদ খেতে দেওয়া যাওয়া যাবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এটাও তো আমাকেই দেখতে হয়। ওই মহিলারা যদি মদ খেতে যান, সেখানে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায়, তখন কী হবে? সে জন্য তো আমাদেরই পাহারা দিতে হচ্ছে।’’ বস্তুত ‘রাত দখল’ কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষের আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখন দেখতে পাচ্ছি, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পরের দিনই বিদেশে বেড়াতে চলে গিয়েছেন অনেকে। পুজোয় মন নেই বললেও প্রতিবাদী মুখ, প্রতিবাদে অগ্রণী ব্যক্তিরাই পুজো উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য কালনা শহরের বড় বড় দোকান থেকে দামি শাড়ি কিনছেন।’’

মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হইহই শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। পূর্ব বর্ধমানের জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল সরকার বাংলায় ক্ষমতায় এসে উজাড় করে মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়ে গিয়েছে। মদ বিক্রি থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় রাজ্য সরকার। এখন রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে স্বপন দেবনাথ যদি আবার গভীর রাতে মদের দোকানে গিয়ে কে মদ খাচ্ছেন, সেটা দেখতে যান, সেটা আরও বড় লজ্জার।’’ তবে এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই আন্দোলন থেকে সিপিএম, বিজেপি নিশ্চিত ভাবেই ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আন্দোলনটা মূলত জুনিয়র ডাক্তারদের এবং নাগরিক সমাজের। ওই আন্দোলন সম্পর্কে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, নাগরিক আন্দোলনকে কোনও ভাবে অসম্মান করা যাবে না। তাই যে স্তরের নেতামন্ত্রীই হোন না কেন, তাঁদের সবারই এই নির্দেশ মেনে চলা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE