Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rockslide at Para

গ্রামের পাশে ভাঙল পাহাড়, নিমেষে ধসে গেল গাছ-পাথর

পাহাড়িগোড়া পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়েছে।

পাহাড়িগোড়া পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়েছে। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়া শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৬
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল।

অবৈধ ভাবে এবং অপরিকল্পিত ভাবে পাথর কাটায় পাড়া ব্লকের পাহাড়িগোড়ার পাহাড় বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়েরা। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এ বার ধস নামল ওই পাহাড়ে। স্থানীয়দের দাবি, গত সোমবার পাহাড়ের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ছোটখাটো ধস নামতে শুরু করে। পরের দিন, মঙ্গলবার পাহাড়ের একপাশে প্রায় ৫০-৬০ ফুট এলাকা জুড়ে বিশাল ধস নামে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যেই ধস রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহাড়িগোড়ার ওই ছোটখাটো পাহাড় থেকে দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে পাথর কাটা চলছে। সে কারণে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে প্রচুর গর্ত। তাই পাহাড় রক্ষার দাবিতে এলাকার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা তৈরি করেন ‘পাহাড় ও পরিবেশ বাঁচাও কমিটি’। ইতিপূর্বে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে পাহাড় রক্ষার দাবিতে তাঁরা স্মারকলিপি দেন।

কমিটির সম্পাদক পদ্মলোচন মাহাতো জানান, পাহাড়ের উপরের দিকে অংশে ধস নেমেছিল, তার ৩০ ফুট দূরেই আছে পাহাড়িগোড়া থেকে গোলকুণ্ডা মোড় হয়ে পুরুলিয়া যাওয়ার রাস্তা। ধস নামার পরে এখন সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। পদ্মলোচনের দাবি, ‘‘পাহাড়ে যে এলাকায় ধস নেমেছে, ঠিক তার পাশেই সম্প্রতি স্থানীয়েরা করম পুজোর অনুষ্ঠান করেন। পুজোর দিনে ধস নামলে যে কী ঘটত, ভেবেই সবার বুক কেঁপে যাচ্ছে।’’

পাহাড়ের একশো থেকে দেড়শো মিটার দূরেই আছে জনবসতি। পাহাড়িগোড়া, সিঁদুরপুর, গহিরা প্রভৃতি গ্রাম রয়েছে ওই পাহাড়ের পাশেই। স্থানীয়েরা জানান, মঙ্গলবার বেলায় প্রচন্ড শব্দ শুনে তাঁরা বাইরে এসে দেখেন, পাহাড়ের একাং‌শ থেকে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়েছে মাটি, বড় পাথরের চাঙড়, গাছপালা। বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ের আশপাশে এবং উপরে অনেকেই গবাদি পশু চরাতে নিয়ে যান। ধসের সময় কেউ ওই এলাকায় ছিলেন না। থাকলে বড় বিপর্যয় ঘটে যেত। ওই ঘটনার পরে আর কেউ সেখানে যাচ্ছেন না। তবে বাসিন্দাদের আশঙ্কা, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে পড়েছে। ফলে আগামী দিনে আরও বড় আকারে ধস নামলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় বাসিন্দারা।

‘পাহাড় ও পরিবেশ বাঁচাও কমিটি’-র দাবি, অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে পাথর কাটার জন্যই এই বিপর্যয় ঘটেছে। কারণ পাথর কাটা হলেও বড়সড় গর্তগুলি ভরাট করা হয়নি। ওই কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘আগেই আমরা গর্তগুলি ভরাট করে পাহাড় রক্ষার দাবি জানিয়েছিলাম। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো পাহাড়ের একটা অংশ ধসের কবলে পড়ত না।”

এই ঘটনার পরে নতুন করে প্রশাসনের কাছে পাহাড়টিকে রক্ষার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধুমাত্র অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে পাথর কাটার জন্যই ধস নামল পাহাড়িগোড়ার পাহাড়ে। ওই পাহাড়ে প্রচুর গাছ-সহ নানা প্রাণী আছে। এ ভাবে ধস নামায় তারাও বিপন্ন। বাসিন্দাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গোটা এলাকা বিপজ্জনক হয়ে আছে। দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।’’

পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপক কুম্ভকার বলেন, ‘‘পাহাড়িগোড়া পাহাড়ে ধস নামার কথা শুনেছি।তবে ওই পাহাড়ে অতীতে পাথর কাটা হয়েছিল। এখন প্রশাসন পদক্ষেপ করে সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়েছে।পাহাড় রক্ষায় কী করণীয়, তা দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, আপাতত বাসিন্দাদের পাহাড়ের আশপাশে যেতে
বারণ করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Para
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy