মালডাঙা সেতুর নীচে রাস্তা ভেঙেছে জলের তোড়ে। উল্টে গিয়েছে ধানবোঝাই লরি। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।
টানা বৃষ্টির পরে রোদের দেখা মিললেও জেলার বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। কোথাও রাস্তায় জল উপচে যান চলাচল বন্ধ, কোথাও মাটির বাড়ি ভেঙে ঘরহারা বাসিন্দারা।
মন্তেশ্বরের মালডাঙা সেতুর নীচের রাস্তাতেও ধস নেমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাস চলাচল। প্রায় কিলোমিটার খানেক রাস্তা জলমগ্ন হয়ে থাকায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে রবিবার সকালে জলে ভাঙা রাস্তায় উল্টে যায় ধানের বস্তাবোঝাই একটি লরি। তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। লরি তুলে হাঁটা পথ বের করতেই নাকাল হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনিতেই এই রাস্তা ধরে বোলপুর যাওয়া যায়। বহু ছাত্রছাত্রীও নিয়মিত আসেন মন্তেশ্বর গৌরমোহন কলেজে। এ ছাড়াও সরকারি কার্যালয়, হাটবাজার-সহ অজস্র প্রয়োজনে কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মালডাঙা সেতুর নীচ থেকে এই রাস্তার কিলোমিটার খানেক অংশ দীর্ঘদিন ধরেই নিচু। বারবার ঢালাই ভেঙে যাওয়ায় মাস তিনেক আগে পিচ ঢেলে নতুন ভাবে গড়াও হয় রাস্তাটি। নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে বসানো হয় বেশ কিছু পাইপ। বাসিন্দাদের দাবি, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে রাস্তার আশপাশের মাঠ ভরে ওঠে। শুক্রবার রাত থেকেই এলাকার বুথপুর ,পানবরুই ইত্যাদি বেশ কিছু এলাকায় জলের চাপ বাড়ায় মাঠ ছাপিয়ে রাস্তার উপরে কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে যায়। শনিবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় বাস চলাচল। ফলে এক পার থেকে অন্য পারে যেতে সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষকে। পুলিশের তরফে মাইকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। রবিবার সকাল থেকে জল একটু কমতে দেখা যায়, জমা জলে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গিয়েছে। কোথাও কোথাও বিপজ্জনক গর্তও হয়ে গিয়েছে। কিছু পরে এই রাস্তা ধরে যেতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় একটি ধানবোঝাই লরি। প্রচুর ধানও নষ্ট হয়।
এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘রাস্তার এ পাশ-ও পাশে বাস পরিষেবা সচল থাকলেও রাস্তা পেরোনোটাই সমস্যা।’’ তাঁর দাবি, প্রথম থেকে রাস্তাটি নির্মাণে সমস্যা ছিল। দ্রুত রাস্তাটি ভেঙে উঁচু করে না গড়া হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে বলেও তাঁর মত। মন্তেশ্বরের বাসিন্দা মিঠুন অধিকারীও বলেন, ‘‘এটি এলাকার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু মালডাঙা সেতু থেকে কিলোমিটার খানেক রাস্তা এখনও জলমগ্ন থাকায় নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’’ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি অঞ্চলের প্রায় ৮টি গ্রামও এখনও জলের তলায়। জলে ভেসে গিয়েছে উদ্ধারণপুর-বোলপুর রাস্তা। প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধস নেমেছে ওই রাস্তায়। এ ছাড়া শাঁখাই, নৈহাটি, উদ্ধারণপুর গ্রামের বহু পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। শাঁখাইয়ের লালু বৈরাগ্য, শিলুড়ির আনোয়ার শেখরা বলেন, ‘‘কাঁচা বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছি। রাস্তাতেও বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে অনেককে।’’ কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল জানান, পারুলিয়া গ্রামের ৫টি পরিবারকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে সব্জিতেও। গঙ্গাটিকুরি, বিল্লেশ্বর প্রভৃতি গ্রামের বহু জমিতে জল জমে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। সীতাহাটি অঞ্চলের উপপ্রধান বিকাশ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘জেলা পরিষদকে ত্রাণের কথা জানিয়েছি। দ্রুত রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনও জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy