Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Raju Jha Murder Case

বাম আমলে উত্থান, তার পর পতন, নতুন করে ‘সিন্ডিকেট’ খুলতে গিয়েই কি প্রাণ গেল রাজুর?

আসানসোলের বাসিন্দাদের একাংশের মতে, বাম আমলে কয়লা কারবারের ‘বেতাজ বাদশা’ ছিলেন রাজু। পুলিশ সূত্রে খবর, কয়লা পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। এক সময় হয়ে ওঠেন পাচারচক্রের নিয়ন্ত্রক।

Rise of Raju Jha who was killed in Saktigarh by a shoot out

রাজেশ ঝা ওরফে রাজু। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও শক্তিগড় শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪১
Share: Save:

আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লা খনি এলাকায় অতি পরিচিত নাম রাজেশ ঝা ওরফে রাজু। কেউ কেউ বলেন, ‘নাম’ নয়, আসলে আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিল রাজুর ‘বদনাম’। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রাজ্য তো বটেই, ভিন্‌ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ ছিল রাজুর বিরুদ্ধে। কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছেন। জেলও খেটেছেন। বছর বাষট্টির সেই রাজুই শনিবার রাতে খুন হয়ে যান পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে, আমড়া মোড়ের কাছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর।

বাম আমলে দুর্গাপুর এবং আসানসোলকে কেন্দ্র করে, পশ্চিম বর্ধমানের বড়সড় এলাকা জুড়ে কয়লার বেআইনি কারবারের ‘বেতাজ বাদশা’ হয়ে উঠেছিলেন রাজু। আশির দশকের শেষ দিকে থেকে রাজু কয়লা পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশের সেই সূত্রেরই দাবি, কালক্রমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন চক্রের অন্যতম মাথা, অন্যতম নিয়ন্ত্রক। সেই পর্বেই দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে দুর্গাপুর পুরনিগমেরই তৈরি শপিং মলে কাপড়ের দোকান খুলেছিলেন তিনি। শুরু করেন হোটেল ব্যবসাও। রাজুর ঘনিষ্ঠ মহলের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের পর থেকে কয়লা কারবার আর চালিয়ে যেতে পারেননি রাজু। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কিছু দিন চুপচাপ থাকলেও, ২০১৫ সাল নাগাদ সেই কারবার আবার শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পেরে ওঠেননি। এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে কলকাতা পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র এবং নগদ ৩৫ লক্ষ টাকা-সহ গ্রেফতার করে রাজুকে। এর পরেও একাধিক বার পুলিশ এবং সিআইডি গ্রেফতার করেছিল তাঁকে।

অতীতে সক্রিয় দলীয় রাজনীতিতে তাঁকে দেখা না-গেলেও, রাজ্যে গত বিধানসভা ভোটের আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। দুর্গাপুরে পলাশডিহার মাঠে সাংসদ অর্জুন সিংহের হাত ধরে গেরুয়াশিবিরে ঢোকেন রাজু। সেই অর্জুন অবশ্য এখন দলবদল করে আবার তৃণমূলে। তবে ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর, সে ভাবে আর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি রাজুকে।

মাস ছয়েক আগে ‘আইনি’ পথে কয়লা ব্যবসায় নামেন রাজু। পাশাপাশি, তিনি নতুন সিন্ডিকেট তৈরির চেষ্টা করেছিলেন বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশের মতে, সেই সিন্ডিকেট তৈরির কাজ এগিয়েও ছিল খানিকটা। কিন্তু তার আগেই আততায়ীদের গুলিতে নিহত হলেন তিনি। রাজু পরিবহণ ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি, ‘গণপতি সিকিউরিটি’ নামে একটি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগে সিটি সেন্টারে রাজুর পরিবহণ সংস্থার দফতরে ঢুকে কে বা কারা গুলি চালিয়ে গিয়েছিল। সে সময় রাজু অফিসে ছিলেন না। সেই ঘটনার সঙ্গে শনিবারের হামলার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা-ও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

শনিবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ খুন হওয়ার সময় এসইউভি-তে চালকের পাশে বসেছিলেন রাজু। পিছনের আসনে ছিলেন ব্রতীন মুখোপাধ্যায় নামে দুর্গাপুরের বেনাচিতির এক বাসিন্দা। আততায়ীদের হামলায় জখম হন তিনিও। এ ছাড়াও গরু পাচারকাণ্ডে সিবিআই চার্জশিটে নাম থাকা বীরভূমের এক ব্যবসায়ীও গাড়িতে ছিলেন বলে একাধিক সূত্রের দাবি। যাঁর সঙ্গে সম্প্রতি রাজুর ব্যবসায়িক যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও গাড়িতে তিনি ছিলেন কি না, এ নিয়ে পুলিশের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছেন, তাঁরা আততায়ীদের ধরতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিচ্ছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই অনেক তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে অকুস্থলে থাকা সিসিক্যামেরার ফুটেজও। রাজুর খুনের পর দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা এলাকার বিধাননগরে তাঁর বাড়িতে এখন থমথমে পরিবেশ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজুর স্ত্রী থাকতেন না সেখানে। থাকেন তাঁর বড় ছেলে এবং অন্যরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Shootout Murder coal mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy