E-Paper

পাকা ধানে বৃষ্টির মই

কৃষি কর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গোবিন্দভোগ চাষ হয়।

বৃষ্টিতে জল ভরা চাষের জমি। বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড়ে। নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টিতে জল ভরা চাষের জমি। বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৩
Share
Save

পূর্বাভাস ছিল। তবে অসময়ে এত বৃষ্টি হবে সেই আশঙ্কা ছিল না। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে চাষিদের। বৃষ্টির অভাবে ধান রোপণে দেরি হয়েছিল গলসিতে। ধান কাটার মুখে আচমকা বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে। শুধু গলসি নয়, জেলায় স্বর্ণ আর গোবিন্দভোগ ধানের কিছুটা কাটতে বাকি রয়েছে। আবার অনেক জায়গায় স্তূপীকৃত কাটা ধান নিম্নচাপের বৃষ্টির জেরে খারাপ হতে পারে বলে চাষিরা মনে করছেন। তাঁদের ধারণা, বৃষ্টিতে ভেজা ধানে আর্দ্রতা ও কালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সহায়কমূল্যে বিক্রিতে অসুবিধা হবে। খাদ্য দফতরের কর্তারাও জানাচ্ছেন, এমনিতেই ধান বিক্রির গতি কম। নিম্নচাপ ধান কেনায় আরও বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

শুক্রবার ফুলেশ্বরের মনসাতলায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিয়েবাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আবহাওয়া দফতরকে নির্দেশ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই চাষিরা আগাম আবহাওয়ার খবর জানতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, বৃষ্টিতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ধান, আলু ও আনাজ চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষিঋণ মকুবের পাশাপাশি বিনামূল্যে পঞ্জাবের আলুবীজ দেওয়ার দাবি তোলেন শুভেন্দু। মুখ্যসচিবকে ই-মেল করেছেন বলেও জানান।
এ দিনই কার্শিয়াঙের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃষ্টিতে চাষে ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‘কাল বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। এখানে কৃষিসচিব ওঙ্কারসিংহ মিনা আছেন। মুখ্যসচিবও আছেন। তাঁদের বলছি যে, আমাদের রাজ্যে যে শস্য বিমা আছে, তা দেখে যেন ক্ষতিগ্রস্তদের সুরাহার ব্যবস্থা করা হয়। চাষিভাইদের এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

কৃষি কর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গোবিন্দভোগ চাষ হয়। এখনও পর্যন্ত জেলায় ৮৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। কিছু জমিতে পড়ে রয়েছে গোবিন্দভোগ ও স্বর্ণ ধান। তবে জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নকুলচন্দ্র মাইতি বলেন, “ধানের ক্ষতি নিয়ে এখনই কিছু বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। জমি থেকে জল নেমে গেলে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” কৃষি কর্তাদের অবশ্য দাবি, জমিতে কাটা ধান পড়ে থাকলে জলে ভিজে নীচের দিকের ধানের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বা ধান চিটে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গলসি ২ ব্লকে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছিল। ধান কাটা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে। চাষিরা জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি হতে পারে, আন্দাজই করতে পারেননি তাঁরা। সেই ‘গড়িমসি’র লোকসাম গুণতে হচ্ছে এখন। গলসি ১ ব্লকের অনেক পঞ্চায়েত এলাকাতেও ধান জমিতে পড়ে রয়েছে। সেখানকার চাষিদের একাংশের দাবি, দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় ধান বুনতে সমস্যা হয়েছিল। অনিয়মিত বৃষ্টির জন্য ধান রোপণও কম হয়েছে। তার উপরে শেষের এই বৃষ্টি আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দিল। কাটোয়াতেও কাটা ধান ভিজে যাওয়ায় ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা। আবার বেশ কিছু এলাকায় ধান কাটাও হয়নি। চাষিদের দাবি, সেচখালে প্রচুর জল আসায় জমি নরম ছিল। তাই ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টর’ নামানো যায়নি। দিনে প্রায় চারশো টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটানো হলেও সেই ধান শ্রমিকের অভাবে ঘরে তোলা যায়নি। মঙ্গলকোটের গুরুসদয় চৌধুরী, কেতুগ্রামের শিশির ঘোষেদের দাবি, “অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে ধান কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি অনেক ক্ষতি করে দিল।”

সবে থেকে সমস্যায় পড়েছেন দক্ষিণ দামোদরের গোবিন্দভোগ ধানের চাষিরা। কয়েক দিন আগে শোষক পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হয়েছিল। এ বার জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকায় ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। দেবু দাস, সৈয়দ হাসিমদের দাবি, “কেউ কেউ আগে ধান কেটে ফেলেছেন। তবে গোবিন্দভোগ ধান কাটার এটাই সময়। বৃষ্টিতে ফলন মার খাবে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বার জেলায় ধান কেনার গতি কম। পূর্ব বর্ধমানের আগে অনেক জেলা ধান কেনায় এগিয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ২৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। খাদ্য দফতরের এক কর্তার দাবি, “গত বছরের চেয়ে ১.৭০ লক্ষ টন ধান বেশি কিনতে হবে। গতি বাড়ার মুখে নিম্নচাপ ধান কেনায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ভিজে ধান তো আর নেওয়া যাবে না!” ধানের আর্দ্রতার কারণে খোলা বাজারেও দাম মিলবে না, আশঙ্কা চাষিদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Galsi sudden rainfall

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।