Advertisement
E-Paper

কয়লা-ক্ষেত্রে জীবন ঝুলছে সরু সুতোয়

খনি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়লার স্তর কেটে তোলার পরে ফাঁপা হয়ে যায় ভূগর্ভ। মাটির উপরি ভাগ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

 রানিগঞ্জের অমৃতনগরে মাটি ফুঁড়ে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। ছবি: পাপন চৌধুরী

রানিগঞ্জের অমৃতনগরে মাটি ফুঁড়ে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০১
Share
Save

১৬ জুন, ২০১১। পাণ্ডবেশ্বরের পরাশকোলে একই পরিবারের চার জন গ্রামের প্রায় শেষ প্রান্তে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আচমকা ধসে চার জনেই তলিয়ে যান ভূগর্ভে।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩। ডিসেরগড় লাগোয়া শিশুবাগানের বাসিন্দা, বছর ১৮-র হেনা পারভিন বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন। বাড়িতে তাঁর বিয়ের প্রস্তুতিও চলছিল। আচমকা উঠোনে ধস নামে। প্রায় ৭২ ঘণ্টা পরে উদ্ধার হয় হেনার কঙ্কাল।

১৯ জুন, ২০২০। অন্ডালের জামবাদ। গভীর রাতে বাড়ি-সহ ভূগর্ভে তলিয়ে যান শাহনাজ বেগম।

— শুধু এই তিনটি ঘটনা নয়, রানিগঞ্জ-আসানসোল কয়লা শিল্পাঞ্চলে এ ভাবেই ধসের জন্য মানুষের জীবন যেন সরু সুতোয় ঝুলছে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানিগঞ্জের ধস-পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তার পরে ফের ধসের নানা ঘটনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলায়। কোল ইন্ডিয়ার পর্যবেক্ষণ, আসানসোল ও রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে প্রায় ১৪৬টি ধস কবলিত এলাকা রয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু কী ভাবে এমন ক্ষতি, কী ভাবেই বা নামছে ধস— এ নিয়েই ফের আগ্রহ পশ্চিম বর্ধমানে।

খনি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়লার স্তর কেটে তোলার পরে ফাঁপা হয়ে যায় ভূগর্ভ। মাটির উপরি ভাগ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় ফাঁপা অংশে বালি ভরাট করতে হয় অথবা শাল কাঠের খুঁটি ব্যবহার করে উপরের অংশকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। এই দু’টি কাজে কোনও রকম গাফিলতি হলেই ধসের সম্ভাবনা থাকে।

কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন আধিকারিক তথা খনি বিশেষজ্ঞ অনুপ গুপ্তদের মতো কেউ-কেউ জানাচ্ছেন, ১৯৭২-এ কয়লা শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে আসানসোল ও রানিগঞ্জে বেসরকারি খনি সংস্থাগুলি শতাধিক খাদান বানিয়ে কয়লা তুলেছে। আর এটা ধারাবাহিক ভাবে চলেছে উনিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে। ওই বেসরকারি খাদান মালিকেরা কয়লার স্তর কেটে তোলার পর ভূগর্ভের ফাঁপা অংশে বালি ভরাট করেননি। মাটির উপরের অংশ ধরে রাখার জন্য শালকাঠের খুঁটিও ভূগর্ভে বসাননি। এই ‘গাফিলতির’-ই ফল এখন ভুগছেন জেলার বাসিন্দারা।

এই পরিস্থিতিতে সাঁকতোড়িয়ার বিমান মুখোপাধ্যায়, সামডির দিবাকরেরা বলেন, “জীবন, জীবিকা সব যেন সরু সুতোয় ঝুলছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যাব। মানুষের প্রাণের দাম বড়ই কম।”

তবে শুধু বেসরকারি আমল নয়, গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ ভাবে কয়লা খননও ধসের বড় কারণ বলে মনে করছেন খনি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই জেলায় কোল ইন্ডিয়ার দুই সংস্থা ইসিএল ও বিসিসিএল-এর কয়েক হাজার একর জমি আছে। সব জমিতেই কয়লা খনি হয়নি। এই জমিকে বলা হয় দুই সংস্থার ‘লিজ় হোল্ড’ এলাকা। জমির তলায় উন্নত মানের কয়লার রয়েছে। কয়েক হাত খুঁড়লে সহজে কয়লা মেলে। কুখ্যাত কয়লা মাফিয়ারা সেই জমিতে অবৈধ কয়লা খাদান বানিয়ে কয়লা তুলেছে দীর্ঘদিন। মাটির তলায় অবিরাম সুড়ঙ্গ বানানো হয়েছে। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া এ সব অবৈধ খাদানগুলির জন্যও ভূপৃষ্টের উপরের অংশ আলগা হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধসে পড়ছে। পাশাপাশি, বৈধ খনিতেও দেওয়াল কেটে সুড়ঙ্গ বানাচ্ছে কয়লা চোরেরা। এতেও ধস নামছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন লাগোয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা।

কিন্তু কেন বাসিন্দারা ভিটেমাটি ছেড়ে যাননি, কয়লা চুরি রুখতে কী পদক্ষেপ পুলিশ-প্রশাসন-ইসিএলের, পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজই বা কবে শেষ হবে, রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি কী ভাবে উঠে আসছে— এমন নানা চর্চা রয়েছে জেলা জুড়েই। (চলবে)

Raniganj Coal Mine Asansol

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।