সিটি সেন্টারের বেঙ্গল অম্বুজা উপনগরীর নানা এলাকায় রাস্তার হাল এমনই। ছবি: বিকাশ মশান
আর কত দিন? কবে হবে? আদৌ কি হবে? রাস্তাঘাটের প্রসঙ্গ উঠলেই এমনই নানা প্রশ্ন ওঠে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের বেঙ্গল অম্বুজা উপনগরীতে। দুর্গাপুর পুরসভা বারবার বলেছে, রাস্তা সংস্কারের দায়িত্ব আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ)। আর এডিডিএ-র বরাবরের আশ্বাস, দ্রুত কাজ হবে। কিন্তু কাজ শুরু আর হয় না, আক্ষেপ বাসিন্দাদের।
সিটি সেন্টারে ২০০১-এ প্রায় ১২২ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে বেঙ্গল অম্বুজা টাউনশিপ। প্রথমে বিভিন্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু ‘ফ্ল্যাট’ তৈরি করা হয়। এর পরে একে একে বাড়ি এবং অন্য বহুতল আবাসন তৈরি হয়। এখনও আবাসন তৈরি হচ্ছে। ফলে, বাসিন্দার সংখ্যা বাড়ছে। মূল রাস্তার মোড়ে গোলাকার আইল্যান্ড তৈরি করা হয়। উপনগরীর কেন্দ্রে দু’টি প্রসারিত হাতের আদলে তৈরি হয় নান্দনিক কাঠামোও।
কিন্তু, এই উপনগরীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ সে ভাবে হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে। আইল্যান্ডগুলি খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে। নান্দনিক কাঠামোর একাংশ ভেঙে পড়েছে। বহু জায়গায় রাতে আলো জ্বলে না। তবে পথের অবস্থা নিয়েই বাসিন্দারা সব থেকে বেশি সমস্যায়।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, উপনগরীর প্রতিটি মূল রাস্তা খন্দে ভরা। ‘বিটুমিনে’র বালাই নেই। এই পরিস্থিতিতে ভাঙা রাস্তা দিয়েই চলে যাতায়াত। স্থানীয় বাসিন্দা উৎপল চট্টোপাধ্যায়, গণেশ রায়দের ক্ষোভ, ‘‘এলাকায় পেল্লাই সব ঝকঝকে বাড়ি রয়েছে। অথচ গেট খুলে বেরোলেই খন্দে ভরা রাস্তা। মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। বিপদের ঝুঁকি মাথায় প্রবীণেরা সকাল-বিকেলে হাঁটতে বেরোন। শিশুরা বিকেলে সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। যে কোনও সময়ে বড় বিপদ ঘটতে পারে।’’ এই উপনগরীতে আবাসনের পাশাপাশি, রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার অফিস। সুকান্ত গোস্বামী, অনিমা সামন্তের মতো সেই সব সংস্থার কয়েকজন কর্মরত বলেন, ‘‘মোটরবাইক বা স্কুটি অত্যন্ত সাবধানে চালিয়ে যাতায়াত করি। যা রাস্তা, তাতে সামান্য অসাবধান হলেই উল্টে যাওয়ার ভয়।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর পাঁচেক ধরে রাস্তা বেহাল। পুরসভার কাছে রাস্তা সারাইয়ের জন্য বারবার দরবার করেও লাভ হয়নি। ভিতরের রাস্তাগুলিতে দু’-এক বার তাপ্পি দেওয়া ছাড়া কিছুই হয়নি। মূল রাস্তায় ন্যূনতম সংস্কার হয়নি।
কিন্তু কেন এই হাল?
পুরসভার দাবি, সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তারা করে। কিন্তু রাস্তার আমূল সংস্কার করার মতো অর্থ পুরসভার হাতে নেই। স্থানীয় ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এডিডিএ-সহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি।’’ তিনি জানান, গত বছর দুর্গা পুজোর আগে চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাস্তাঘাটের কাজ চলা গোছের সংস্কার করার পরিকল্পনা নেয় পুরসভা। সেই সময়েই দরপত্র ডাকে এডিডিএ। পুরসভা তাই এ কাজে আর এগোয়নি। ডেপুটি মেয়রের আরও বক্তব্য, ‘‘এডিডিএ-র কাজ আজও শুরু হয়নি। দ্রুত কাজ করুক এডিডিএ, সেই আর্জি জানিয়েছি।’’ এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, উপনগরীর রাস্তাঘাট আমূল সংস্কার করে টেকসই ‘ম্যাস্টিক রোড’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
তা হলে রাস্তা সংস্কারে হাত পড়েনি কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়। এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, দরপত্র ডেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ফের দরপত্র ডাকা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে এবং এক বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টেন্ডার নিয়ে সমস্যা থাকায় কাজ করা যায়নি। আশা করা যায় এ বার সমস্যা মিটবে। দ্রুত কাজ হবে।’’ এ ছাড়া উপনগরীর নর্থ অ্যাভিনিউ এলাকায় এলইডি পথবাতি বসাতে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে এডিডিএ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy