দেওয়া হচ্ছে কার্ড। নিজস্ব চিত্র।
হাত ভেঙে গিয়েছে নিঃসন্তান বিধবার। পড়শি-পরিজনেরা প্রাথমিক চিকৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছিল, সে জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। তাই দ্রুততার সঙ্গে বুধবার বিকেলে মেমারির বাগিলা গ্রামের ৮২ বছরের বৃদ্ধার হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তুলে দিলেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা।
বাগিলা গ্রামের শিবতলায় একতলা বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধা দীপালি দে। স্বামী দীর্ঘদিন আগে প্রয়াত হওয়ায় একাই থাকেন বৃদ্ধা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েকদিন আগে রাতে শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে পড়ে গিয়ে হাতের হাড় ভেঙে যায় বৃদ্ধার। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, কনুইয়ের কাছে ‘বল’ ভেঙে গিয়েছে। বর্ধমান শহরের কাছে একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন পড়শি-পরিজনেরা। তাঁরা জানান, চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ ৭ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।
এ দিন বিকেলে বৃদ্ধার বাড়িতে যান পঞ্চায়েতের কর্মী শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য, সোমশুভ্র মুখোপাধ্যায়েরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের প্রলয় পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানতাম। তাই পঞ্চায়েত প্রধান অরিন্দম ঘোষালকে জানাই। তিনি দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধার হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।’’ পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না। তা জানার পরেই পঞ্চায়েতের কর্মীরা তৃণমূলের ওই সদস্যকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান। সেখানেই কার্ড তৈরির জন্য যন্ত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। ফর্ম পূরণ, সই করানোর পরে তাঁর হাতে কার্ড তুলে দেন।
এ দিন বৃদ্ধা বলেন, ‘‘টাকার অভাবে অপারেশন আটকে গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া কার্ড দেখালেই না কি চিকিৎসা করে দেবেন ডাক্তারেরা। যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছি।’’ বিডিও (মেমারি ১) মহম্মদ ওয়ালিউল্লা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়ে বৃদ্ধা হাতের অস্ত্রোপচার করাতে পারবেন। খুব ভাল কাজ হয়েছে।’’
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি করে দ্রুত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে বলে দাবি প্রশাসনের। সম্প্রতি বর্ধমান পুরসভার ৭ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দুই ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে আসেন আধিকারিকেরা। এমন কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েও অনেকে প্রকল্প চালু হওয়ার এত পরে কেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মিলছে, সে প্রশ্ন তুলছেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মীদের একাংশের উদ্যোগের অভাবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে এত দিন বঞ্চিত থাকতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ নাগরিকদের অনেকের। বর্ধমানের বাসিন্দা মালা মাজি, মেমারির শক্তি হাজরা, গলসির সফিউল্লা মোল্লাদের দাবি, ‘‘২০১৬ সাল থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হলেও এত দিন বঞ্চিত ছিলাম। ভোট আসতে সরকারের টনক নড়ল।’’
যদিও জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘আমরা জরুরি ভিত্তিতে হাতে-হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছি। সকলে যাতে দ্রুত সেই কার্ড পান, সেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যাতে চিকিৎসা দিতে বাধ্য থাকে, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy