Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kazi Nazrul University

প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়েই

আচার্য সিভি আনন্দ বোসের দফতর থেকে অস্থায়ী উপাচার্যকে বরখাস্ত করার চিঠি পাঠানো হয়। তার পাল্টা সাধন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।

An image of Kazi Nazrul Islam University

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৯:১৯
Share: Save:

অস্থায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবিতে টানা শিক্ষক-আন্দোলন, রাজ্যপাল তথা আচার্যের নির্দেশ, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ— গত ১৩ মার্চ থেকে এমন নানা ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হচ্ছে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। এই পরিস্থিতিতে, আজ, বুধবার প্রকাশিত হবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। জেলার ২৮৮১৪ জন ছাত্রছাত্রীরও ফল প্রকাশ হবে। পশ্চিম বর্ধমানের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্তর্গত বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হবেন। এমন এক আবহে, পড়াশোনা নয়, বরং অন্য নানা বিষয়ে টানা চর্চায় থাকার কারণে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম কতটা অক্ষুণ্ণ থাকছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আচার্য সিভি আনন্দ বোসের দফতর থেকে অস্থায়ী উপাচার্যকে বরখাস্ত করার চিঠি পাঠানো হয়। তার পাল্টা সাধন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সাধন জানান, আদালতের নির্দেশ, আচার্য তাঁকে যে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহারের পরে তাঁকে উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সূত্রের খবর, আচার্যের দফতর থেকে সে চিঠি এসেওছে। কিন্তু সাধনের দাবি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সে চিঠি লেখা হয়নি। ফলে, তিনি পদত্যাগ করবেন না। এই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি মার্চ থেকে যে তিমিরে ছিল, সে তিমিরেইআটকে রয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত সরকারি-পোষিত ১৩টি, তিনটি বেসরকারি এবং পাঁচটি বেসরকারি পেশাদার কলেজ রয়েছে। কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়বে না ঠিকই। কিন্তু এই পুরো ঘটনাপ্রবাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলছে মনে করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশ। বিপ্রতীপ ভট্টাচার্য নামে এক অভিভাবকের বক্তব্য, “আমার এক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা একটি বেসরকারি কলেজে পড়ে। মেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবে। ভেবেছি দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি পেশাদারি কলেজে ভর্তি করব মেয়েকে। কিন্তু উপাচার্য ও শিক্ষকদের এই বিবাদের কথা সর্বত্র জানাজানি হয়েছে। ফলে, শিক্ষা-মানচিত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে।” এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়া-স্বার্থে সব পক্ষ যাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ করেন, সে আহ্বান করছেন আসানসোলের বিধানচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় শিক্ষকদের একাংশ। শিল্পাঞ্চলের একটি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অরুণাভ দাশগুপ্তের বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতি জেলা ও রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর মুখ পুড়িয়েছে। রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোয় অচলাবস্থার ছবিটাই এতে স্পষ্ট হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। আন্দোলনকে সমর্থন করেছে তৃণমূল অনুমোদিত ওয়েবকুপা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বীরু রজকের বক্তব্য, “এই অবস্থার জন্য দায়ী উপাচার্য। তিনি আচার্য ও হাই কোর্টের নির্দেশ মানলেন না। এই পরিস্থিতির জন্য ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।” সাধন যদিও অতীতে প্রতি বারই বিষয়টির দায় ঠেলেছেন আন্দোলনকারীদের দিকেই।

তবে কার বা কাদের জন্য এই পরিস্থিতি, তা এখন বিচার করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন না ওয়েবকুটার জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আর্জি, “পথেঘাটে অভিভাবকেরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। যা একেবারেই ঠিক নয়। দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।” এ দিকে, এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের শিক্ষা দফতরকেই দায়ী করছেন বিজেপির শিক্ষক সেলের জেলা আহ্বায়ক বিকাশ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “যেখানে অচলাবস্থা কাটাতে আচার্য তথা রাজ্যপাল একটি সিদ্ধান্ত নিলেন, সেখানে উচ্চশিক্ষা দফতর সেই সিদ্ধান্তর বিরোধিতা করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিল। এই ডামাডোলের দায় সরকারেরই।” বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করা হলেও উত্তর দেননি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জবাবমেলেনি মেসেজেরও।

অন্য বিষয়গুলি:

Kazi Nazrul University C V Ananda Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy