Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: ভাঙা মনেই সাজবেন জগৎডিহির বহুরূপীরা

প্রতি বছরের মতো এ বারেও মহালয়ার পরে শুরু হয়ে গিয়েছে কীর্তন বেইজ, ফুল্লরা বেইজ, গঞ্জ বেদ-সহ ওই বহুরূপীদের প্রস্তুতি।

সাজ নিয়ে ব্যস্ত বহুরূপীরা।

সাজ নিয়ে ব্যস্ত বহুরূপীরা। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
Share: Save:

পুজোর ক’টা দিন নানা রূপে সেজে তাঁরা ঘুরে বেড়ান পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্তে। কখনও মহীরাবণ, রঘু ডাকাত, কখনও আবার নন্দ ঘোষ— এমন নানা চরিত্রের সাজে সেজে আসানসোলের প্রত্যন্ত গ্রাম জগৎডিহির বাসিন্দা তিনটি পরিবারের সদস্যেরা মণ্ডপ থেকে মেলার মাঠে ঘুরে টাকা, খাবার সংগ্রহ করেন। এই সময়ে কিছুটা বাড়তি রোজগার হয় বহুরূপীদের। প্রতি বছরের মতো এ বারেও মহালয়ার পরে শুরু হয়ে গিয়েছে কীর্তন বেইজ, ফুল্লরা বেইজ, গঞ্জ বেদ-সহ ওই বহুরূপীদের প্রস্তুতি। তবে আশঙ্কা, গত বারের মতো এ বারও হয়তো রোজগার তেমন হবে না।

ঘটনাচক্রে, এই লোকশিল্পটি বাংলার সংস্কৃতির দীর্ঘদিনের অঙ্গ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্পে ‘শ্রীকান্ত’-এর ছিনাথ (শ্রীনাথ) বহুরূপী বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চলচ্চিত্র ‘বাঘ বাহাদুর’— বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে এই শিল্পীদের দীর্ঘদিনের আলাপ। কিন্তু এখন কেমন আছেন এই শিল্পীরা?

কীর্তন জানান, অন্ধ স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। বংশ পরম্পরায় কয়েক পুরুষ ধরে তাঁরা এই পেশায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “এখন আর বহুরূপী সেজে রোজগার তেমন হয় না। বছরভর দিনমজুরি করি। তবে পুজোর সময়ে পুরনো পেশাক অবলম্বন করেই বেরিয়ে পড়ব। কিছু রোজগার হয়।” বহুরূপীরা জানান, পুজোর ক’টা দিন আসানসোল, মিঠানি, আলডিহি, বড়তোড়িয়া, বেজডিহি, পাটমোহনা, রাধানগর-সহ নানা এলাকায় তাঁরা ঘুরে বেড়ান। গঞ্জ বেদ জানান, তাঁরা তিন ভাই। পালা করে তাঁরাও বেরোন বহুরূপী-সাজে। কীর্তনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তোরঙ্গ থেকে রঙিন নানা পোশাক ঝাড়াঝাড়ি করা হচ্ছে। এ বারও সাজবেন তো? প্রশ্ন শুনেই হতাশ গলায় কীর্তন বলেন, “মন ভেঙে গিয়েছে। তবুও ইচ্ছে আছে।” মন ভেঙেছে কেন? কীর্তন, ফুল্লরা, গঞ্জরা জানান, গত বছর করোনার জন্য কোথাও তেমন যাওয়া সম্ভব হয়নি। মণ্ডপে ভিড় জমেনি। গ্রামে-গঞ্জে উৎসাহী মানুষের চেনা ভিড়টাও যেন উধাও। এ বারও হয়তো এমনটা হবে, জানান ওঁরা। অথচ, ওই বহুরূপীদের সূত্রেই জানা গেল, পুজোর পাঁচ দিন সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। সঙ্গে চাল, আলু, খাবার, নতুন জামাকাপড়ও জোটে। কিন্তু গত বার এ সবের প্রায় কিছুই হয়নি। এ বারেও সেই একই আশঙ্কা।

বহুরূপীদের জন্য বছরভর তাকিয়ে থাকেন আট থেকে আশি, সকলেই। বেজডিহি গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক নির্মল চট্টরাজ বলেন, “পুজো যেন বহুরূপীদের ছাড়া, অসম্পূর্ণ। ছোটরাও হেসে লুটোপুটি খায়।” তবে সাজ গোছাতে-গোছাতে বহুরূপী ফুল্লরার আক্ষেপ, “দিনভর পরিশ্রম করে উপযুক্ত পারিশ্রমিকই যদি না জোটে তবে আর এ সবে লাভ কী।” লাভ নেই, তবুও ওঁরা নেশায় বাঁচেন— নেশাটা শিল্পের।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE