চলছে বালি তোলার কাজ। — ফাইল চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরে বালি কাটা হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের অজয় ও দামোদরে। এর ফলে বালির নীচের জলস্তর অনেকটাই কমে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে এমনই অভিযোগ করছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিকদের একাংশ। ওই আধিকারিকদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে দফতরের জলপ্রকল্পগুলি নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে জল সরবরাহ নিয়েও। তবে এ বিষয়ে দফতরের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয়ে বারাবনি থেকে পাণ্ডবেশ্বর পর্যন্ত ১১টি এবং দামোদরে সূর্যনগর থেকে অন্ডাল পর্যন্ত ১০টি জলপ্রকল্প আছে। বালি কাটার জেরে কী ভাবে প্রভাব পড়ছে জলপ্রকল্পে? দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রথমত, ৯০-এর দশকের শেষ পর্যন্তও জল শুকিয়ে গেলেও অজয় ও দামোদরের বালিস্তর ৪০-৫০ ফুট উঁচু হয়ে থাকত। বালির তলা থেকে পর্যাপ্ত জল টেনে নেওয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক বছরে বালিস্তরের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০ ফুট। সে সঙ্গে, কমেছে বালির তলায় জলস্তরের গতিও।এর ফলে, দফতরের বিভিন্ন জলাধারে বর্ষা ছাড়া বছরের অন্য সময়ে জলের জোগান নিয়েই সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বালির স্তরে প্রভাব পড়ায়, নদের বক্ষে জল তোলার জন্য বসানো নলকূপগুলি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষার জলের তোড়ে অনেক সময় সেগুলিভেসেও যাচ্ছে। প্রভাব পড়ছেজল সরবরাহে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বালি তোলার জেরে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে অজয়ের উপরে থাকা পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা খোট্টাডিহি জলপ্রকল্পটির। ২০২০-তে জলাধারের নলকূপটি প্রবল বর্ষণে ভেসে যায়। এর ফলে প্রকল্পটি থেকে প্রায় তিন মাস জল সরবরাহ করা যায়নি। এ দিকে, দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই জলপ্রকল্প প্রতি ঘন্টায় ছ’-সাত হাজার গ্যালন জল উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু বর্ষার পরে সেটা দাঁড়াচ্ছে পাঁচ হাজার গ্যালনের মতো। পাশাপাশি, দামোদরে থাকা রানিগঞ্জের দামালিয়া জলপ্রকল্পটি নিয়েও সমস্যাতৈরি হচ্ছে।
কেন এই পরিস্থিতি? বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বৈধ, অবৈধ ঘাট, দু’ক্ষেত্রেই বালি কাটা হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। অথচ, ‘গ্রিন ট্রাইবুনাল’-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, মানুষ কোদাল, বেলচা দিয়ে বালি তুলতে পারবেন। তা মানা হচ্ছে না। বালির বৈধ ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ মানেননি। প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও, এ বিষয়ে সরাসরি প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা। তবে দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রূপম ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “পশ্চিম বর্ধমানের বড় অংশেই ভূগর্ভস্থ পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না। ফলে, প্রায় সব ক’টি জলপ্রকল্পকে নদের উপর নির্ভর করতে হয়।” তিনি জানান, সমস্যা মেটাতে মাইথনে ১৫.৬ এমজিডি (‘মিলিয়ন গ্যালন পার ডে’) জল উত্তোলনে সক্ষম একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্প থেকে তা হওয়ার কথা। সেখান থেকে জামুড়িয়া, অন্ডাল, রানিগঞ্জ ও পাণ্ডবেশ্বরের একাংশে দু’টি নদের জলপ্রকল্প এলাকায় জল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দফতরের কর্তাদের মতে, কল্যাণেশ্বরীতে দফতরের দৈনিক ১০ মিলিয়ন গ্যালন জল উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জলাধার আছে। সেখান থেকে কুলটি, বারাবনি ও সালানপুরের একাংশ, আসানসোলে জল পাঠানো হত। কুলটিতে আসানসোল পুরসভার উদ্যোগে জলপ্রকল্প তৈরি হয়েছে। ফলে, পুরনো প্রকল্পটির পুনর্নবীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সেটির কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বারাবনি ও সালানপুরে জল পাঠানো হবে।
তবে, বালি তোলার বিষয়ে যে অভিযোগ, তা মানেননি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তথা ডিএলআরও সন্দীপ টুডু বলেন, “পশ্চিম বর্ধমানে রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত ২০টি এবং ইসিএল নিয়ন্ত্রিত ১৮টি বালিঘাট আছে। কোথাও বালি উত্তোলনের জেরে জলপ্রকল্প বিপন্ন হচ্ছে, এমন মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy