বেহাল রায়নার প্রাথমিক স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।
তিন বছর আগে ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গিয়েছিল স্কুল ঘরের টিনের ছাউনি। গত মে মাসে আচমকা ঝড়ে আর একটি ছাউনির বেশ কিছুটা অংশ উড়ে যায়। মাথায় ভাঙা টিন, দেওয়াল দিয়ে জল বেয়ে পড়ার মধ্যে ক্লাস করতে চাইছে না পড়ুয়ারা। বাধ্য হয়ে একটি পাকা ঘরেই ঠাসাঠাসি করে পাঁচটি শ্রেণির ৪২ জন পড়ুয়া বসছে। ঝোড়ো হাওয়া বা বৃষ্টি পড়লে স্কুল কার্যত ছুটি হয়ে যায়। রায়না ১ ব্লকের হাঁকৃষ্ণপুর প্রাথমিক স্কুলের হাল দেখে আরও একটি পাকা ঘর তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ (ডিপিএসসি)।
হাঁকৃষ্ণপুর থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে রায়না ২ ব্লকের পহলানপুর প্রাথমিক স্কুল। এ বছর ৭৫-এ পা দিল স্কুলটি। ১৯৪৮ সালে তৈরি স্কুলে বর্তমানে ১৭৪ জন পড়ুয়া রয়েছে। সময়ের সঙ্গে স্থানীয় অনেক স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটলেও এই স্কুলটি সেই তিমিরেই। টিনের ছাউনি দেওয়া স্কুলে বৃষ্টি পড়লেই শ্রেণিকক্ষ জলে ভরে যায়। ঘরের চার দেওয়ালে শ্যাওলার দাগ। দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। জানলা খুলে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। এই স্কুলে পঞ্চায়েতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা ছিলেন। এখানকার দায়িত্বৃবে থাকা এক ভোটকর্মীর কথায়, ‘‘চারদিকে ফাটল। সাপের ভয়ে কার্যত রাতটা জেগেই কাটাতে হয়েছিল।’’
স্কুলের টিচার-ইন চার্জ মানসী নন্দী বলেন, ‘‘ঠিক মতো মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা যায় না। বৃষ্টি পড়লে অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দিতেও পারি না। স্কুলের নথিপত্র ঠিক রাখতে গিয়েও অসুবিধা হচ্ছে।’’ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল হলেও ঘরের অভাবে ওই শ্রেণিতে পড়ুয়াদের ভর্তি করতে পারে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক অরূপ কুণ্ডু জানান, অভিভাবকরা মাঝেমধ্যেই কথা শোনান। ঘরের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ হয়নি। রায়না ২ ব্লক থেকে টিনের ছাউনির ঘরটি ‘ব্যবহার যোগ্য’ নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চারটে পাকা ঘর দরকার বলে ইঞ্জিনিয়াররা রিপোর্ট দিয়েছেন। বিডিও (রায়না ২) অনীশা যশের আশ্বাস, ‘‘সংশ্লিষ্ট জায়গায় সব জানানো হয়েছে।’’
১৯৭২ সালে তৈরি হাঁকৃষ্ণপুর স্কুলটিতেও টিনের ছাউনি দেওয়া চারটে ঘর রয়েছে। তার একটা বড় অংশের টিনের ছাউনি আমপানে উড়ে গিয়েছিল। দেওয়ালে ফাটল, ঘরের মেঝে দিয়ে জল উঠতে শুরু করে। তার পরেও একটি পাকা ঘর আর একটি টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে ক্লাস করাচ্ছিলেন দু'জন শিক্ষক। গত মে মাসে আচমকা ঝড়ে ওই ঘরটিও বেহাল হয়ে পড়েছে। ফলে সব পড়ুয়াকেই একটা ঘরে বসাতে হয়। মাঝেমধ্যে বারান্দায় বা স্কুল চত্বরে থাকা মাঠেও ক্লাস করান শিক্ষকেরা। অভিভাবকরা সম্প্রতি বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধাড়াকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, আমপানের পরে সমস্ত তথ্য দিয়ে স্কুল সংস্কারের জন্য আবদেন করা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। পর্যাপ্ত ঘর না থাকায় স্কুল মাঝেমধ্যে বন্ধও রাখতে হয়। আবার স্কুলে গিয়ে বিপদের আশঙ্কায় পাঠাতেও ভয় পান অভিভাবকদের একাংশ।
স্কুলের টিচার-ইন চার্জ সঞ্জীব সোম বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলেই স্কুল ছুটি দিতে হয়। এতগুলো পড়ুয়া আমাদের দায়িত্বে রয়েছে। আমরা শঙ্কিত বোধ করি।’’ ডিপিএসসির সচিব স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা দফতরকে ওই স্কুলের ঘরের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
প্রকল্প আধিকারিক (সর্বশিক্ষা) রীনা ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বিধায়ক বলেন, ‘‘ওই স্কুল দু'টিই যাতে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ পায় তার জন্য চেষ্টা
করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy