—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত কয়েক মাস ধরেই আনাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আলুর দামও মাঝেমধ্যে বাড়ছে। আনাজ কারবারিদের দাবি, আদার দাম কিছুটা নাগালে এলেও পেঁয়াজ-রসুনের মতো মশলা জাতীয় আনাজের দাম খুচরো বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে জেলা টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা নিয়েও।
বেশ কয়েক মাস ধরে জেলার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল ৫০ টাকায়। গত কয়েক দিন ধরে কেজিতে পাঁচ টাকা দাম বাড়ে। মঙ্গলবার থেকে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। জ্যোতি আলুর দাম কেজিতে ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, চন্দ্রমুখীর দাম ৩৭ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি হয়েছে। রসুন বিক্রি হচ্ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রসুন ৫০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। লঙ্কার দাম গত দেড়-দু’মাস ধরে দেড়শো টাকা কেজিতে ঘোরাফেরা করছে। আদার দাম কমে ৮০-১০০ টাকা কেজি হয়েছে। তবে খুচরো বাজারে আলু, মশলা জাতীয় আনাজের দাম বেশি হলেও পাইকারি বাজারে দাম কিন্তু অনেকটাই কম রয়েছে। মঙ্গলবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫২ টাকা কেজিতে আর রসুন বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩২০ টাকা কেজিতে।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, পূর্ব বর্ধমানে প্রতিদিন গড়ে ১০ টন রসুন লাগে। পেঁয়াজ লাগে ৫০ টন। জেলায় সে ভাবে রসুন চাষ হয় না। পূর্বস্থলী ১, পূর্বস্থলী ২, কালনা ১ ও ২ এলাকায় পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে রসুনও কিছুটা চাষ হয়। এ ছাড়াও কাটোয়া-কেতুগ্রামে গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় কিছু পরিমাণ রসুন চাষ হয়। এর বাইরে নদিয়া ও হুগলি থেকে রসুন আসে। কিন্তু সেই রসুন পাওয়া যায় মার্চ মাসে। স্থানীয় রসুন শেষ হয়ে যায় এক মাসের মধ্যে। বাকি ১১ মাস রসুনের জন্য নির্ভর করতে হয় উত্তরপ্রদেশ, নাসিক, উটি ও রাজস্থানের উপরে। মশলা জাতীয় আনাজের পাইকারি বিক্রেতা তথা বর্ধমানের চেম্বার অব ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়শনের পূর্ব বর্ধমানের সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদবের দাবি, “রসুন অনলাইনে কেনাবেচা হয়। রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের দু’জন বড় ব্যবসায়ী দেশে মজুত প্রায় সব রসুনই কিনে ফেলেছেন। তাঁরাই রসুন-ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই কারণে গত কয়েক মাস ধরে রসুনের দাম কমছে না।” তবে অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, নাসিক-উটির রসুন কিছুটা কম ঢুকছে। সে কারণেও দাম বেড়ে রয়েছে। ‘চাষি ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশন’-র এক সদস্যর দাবি, “নাসিক থেকে ১০ টন পেঁয়াজ এলে এক টন রসুন আসত। এখন ২০ টন পেঁয়াজের সঙ্গে এক টন রসুন আসছে। পেঁয়াজেরও সরবরাহ অনেকটাই কম।”
আনাজ কারবারিদের দাবি, গত তিন মাস ধরে পূর্ব বর্ধমানে ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। লক্ষ্মী পুজোর সময় ৫৫ টাকা, আর মঙ্গলবার তা ৬০ টাকা কেজিতে পৌঁছয়। জেলায় মূলত পূর্বস্থলী এলাকায় সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু সেই পেঁয়াজ জেলা ছাড়িয়ে কলকাতার বাজারের ‘সুফল স্টল’-সহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পূর্বস্থলীর পেঁয়াজ ছাড়াও মুর্শিদাবাদের নওদা, বেলডাঙা থেকে পেঁয়াজ জেলায় আসে। তাঁদের দাবি, ওই সব পেঁয়াজ বর্ষাকালীন। বাকি সময় নাসিকের উপে নির্ভর করতে হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, নাসিকের পেঁয়াজই একমাত্র দু’বার ফলে। কিন্তু বর্ষার সময় অতিবৃষ্টিরে ক্ষতির মুখে পড়ে নাসিকের পেঁয়াজ। সেই কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
বর্ধমান শহরের প্রান্তিক বাজারে ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া জ্যোতি আলুর দাম মঙ্গলবার তিন টাকা বাড়ে। আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, জেলায় হিমঘরজাত আলুর ২৬% পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে বীজ-আলু রয়েছে ১০-১২%। বাকি আলুতে দেড়-দু’মাস টানতে হবে। এর মধ্যে দানার প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হলে ধান কাটতে দেরি হবে, জলদি আলু চাষও দেরিতে শুরু হবে, দাবি তাঁদের। এই সব ভাবনায় সংরক্ষণকারীরা গত কয়েক দিন ধরে আলু হিমঘর থেকে বার করতে টালবাহানা করছেন, সেই কারণেই দাম বাড়ছে। তবে আলু-ব্যবসায়ীদের দাবি, “কয়েক দিনের মধ্যেই দাম পড়ে যাবে।’’
জেলা টাস্ক ফোর্সের সদস্য থেকে ব্যবসায়ীদের দাবি, পুজোর পর থেকে নিয়মিত ভাবে জেলা টাস্ক ফোর্স বিভিন্ন বাজার ঘুরছেন। পাইকারি আর খুচরো বাজারের মধ্যে দামের পার্থক্য আছে কি না দেখছে। সে জন্য স্থানীয় আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য বলেন, “বাছাই আলুর দাম ৩২ টাকা হলেও গড় আলু ২৬ টাকায় মিলছে। আর রসুন, পেঁয়াজের জোগান কম থাকার জন্য দাম বেশি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy