এত দিন আলু এবং আখ ছাড়া সব ফসলের শস্যবিমার টাকা বহন করত সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেটে আলু চাষের বিমার টাকাও সরকার বহন করবে বলে জানানোয় খুশির হাওয়া পূর্ব বর্ধমানে। তাঁতশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতেও নানা ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আলু চাষের বিমার কিস্তির টাকা দেবে রাজ্য সরকার। এতে রাজ্যের ২০ লক্ষ চাষি উপকৃত হবেন। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির জন্য পঞ্চায়েত স্তরে দু’হাজার ফার্ম মেশিনারি হাব এবং কাস্টম হায়ারিং সেন্টার গঠন করা হবে। এতে কর্ম সংস্থানের সুযোগও রয়েছে। এই খাতে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বীজ, ঋণ পেতে সহায়তা, কৃষিপণ্যের বিপণনের জন্য আগামী তিন বছরে ১২০০ ফার্মাস প্রডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও) গঠনে প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। এর জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেন তিনি।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু চাষের আগে যারা কৃষি ঋণ নেন তাঁদের বিমার টাকা ব্যাঙ্ক কাটে। অঋণী চাষিদের ব্যাঙ্ক থেকে বিমা সংস্থার নামে ড্রাফট কেটে আলু চাষের জমির পরিমাণ অনুযায়ী টাকা দিতে হত। আলু উৎপাদক জেলাগুলিতে চাষের খরচ অনুযায়ী বিমা সংস্থার তরফে কিস্তির অর্থ ঠিক করা হয়। যেমন ২০২৩-২৪ সালের শতক পিছু আলু চাষিদের বিমা ধার্য হয় মুর্শিদাবাদে ৬৯.৬৮ টাকা, হুগলিতে ৩৩.১৫ টাকা, বীরভূম, হাওড়ায় ২৪ টাকা, পূর্ব বর্ধমানে ২২.৩৫ টাকা আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতে ৮.৩০ টাকা।
পূর্ব বর্ধমানে আলু চাষ হয় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। চাষিদের দাবি, আলু চাষে বিঘা প্রতি জমিতে ২৮ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু চাষে দুর্যোগের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।লাগাতার দুর্যোগে গত দেড় দশক ধরে আলুয় নাবিধসার হামলা বাড়ছে। এ বার জানুয়ারিতে চার বার দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। কালনা ২ ব্লকের বাজিতপুর এলাকার আলু চাষি সাদ্দাম শেখ বলেন, ‘‘আলু চাষে বিমার সুযোগ ছিল না বলে দীর্ঘদিন ধরে আক্ষেপ ছিল। বাজেটে অত্যন্তু জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ আলু চাষিদের অনেকেরই দাবি, দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অনেকে। তা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ে। বিমা সেদিক থেকে স্বস্তি দেবে। জেলার এক কৃষি কর্তার কথায়, ‘‘আলু চাষের বিমা নিয়ে অঋণী চাষিদের মধ্যে প্রচারের অভাব ছিল না। তবে ব্যাঙ্কে গিয়ে ড্রাফট কেটে বিমার টাকা জমা দেওয়ার রাস্তায় অনেকেই হাঁটতে চাইতেন না। সরকারের সিদ্ধান্তে সমস্ত আলু চাষিরা উপকৃত হবে। তবে কবে থেকে বিষয়টি কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে নথি আসার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।’’
কৃষির পরে এই জেলায় বেশির ভাগ মানুষ তাঁতশিল্পের উপরে নির্ভরশীল। বাজেটে শিল্পকে চাঙ্গা রাখতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। জানা গিয়েছে, এই পরিকল্পনায় পাঁচশোটি তাঁত সমবায়, দু’শো খাদি সোসাইটি এবং সাধারণ তাঁতিরা উপকৃত হবেন। তাঁতিরা ভর্তুকিতে সুতো পাবেন। পূর্বস্থলীর তাঁতি ধীরেন বসাক বলেন, ‘‘আমার চারটে তাঁত ছিল। এখন একটাও নেই।অন্যের তাঁত চালাই। সুতোয় সরকার ভর্তুকি দিলে এবং কিছু ঋণ পেলে ফের নিজের তাঁতে শাড়ি বুনব।’’ তপন বসাক নামে আর এক তাঁতশিল্পীর দাবি, ভর্তুকিতে সুতো পেলে ভিন্ রাজ্যের শাড়ির সঙ্গে লড়াই করা সহজ হবে। এ ছাড়াও কারিগর ও তাঁতিদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা হয়। ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও তাঁতশিল্পীর দুর্ঘটনা বা স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ওই পরিবার দু’লক্ষ টাকা এককালীন সহায়তা পাবে। এই খাতে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy