গাছের পাতায় আস্তরণ। বক্তারনগরে। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’ শিথিল হতেই জ়োন বিশেষে বিভিন্ন দোকানপাট খোলার অনুমতি মিলেছে। ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে শিল্প-কারখানাও। কারখানা চালু হওয়ায় দূষণ ফের বাড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ, জামুড়িয়ার ইকড়া ও রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, ‘লকডাউন’-এর আগের পর্বগুলি মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ দিন দু’দশক আগেকার মুক্তবাতাস ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি না মেনে কারখানাগুলি ২ মে থেকে চালু হওয়ায় বাতাসে দূষণ বাড়ছে বলে অভিযোগ। যদিও দূষণ-বিধি মেনে চলা হচ্ছে বলে দাবি বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষের।
২০০৩ সালে ইকড়া ও মঙ্গলপুর শিল্পতালুক চালু হয়েছে। ইকড়ায় ১২টি ও মঙ্গলপুরে সাতটি স্পঞ্জআয়রন কারখানা আছে। কারখানাগুলি চালু হওয়ার পর থেকেই সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের বিরুদ্ধে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র না চালানোর অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখার জেরে সংলগ্ন এলাকার গাছের পাতা থেকে জলাশয়ের জল কালো ছাইয়ে ঢেকে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ।
স্পঞ্জ আয়রন তৈরির প্রধান কাঁচামাল আকরিক লোহা। খনি থেকে আকরিক লোহা আনার সময়ে তাতে স্বাভাবিক ভাবে মাটি মিশে থাকে। কারখানায় কয়লার সাহায্যে আকরিক লোহা গলানো হয়। প্রক্রিয়াকরণের সময়ে দূষিত ধোঁয়া বয়লার থেকে বেরিয়ে সরাসরি যাতে বাতাসে না মেশে, তার জন্য প্রতিটি কারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আছে। তা বেশির ভাগ সময়ে চালানো হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
ইকড়া শিল্পতালুক সংলগ্ন শেখপুর, রাজারামডাঙা, বিজয়নগর, ধাসনা, বালানপুর, হুবডুবি, সার্থকপুর গ্রাম ও মঙ্গলপুর শিল্পতালুক লাগোয়া বক্তারনগর, মঙ্গলপুর, ধান্ডাডিহি, বাবুইশোল, পলাশবন, হরিশপুর, নতুন মদনপুর গ্রাম রয়েছে। এই সব এলাকার বাসিন্দারা জানান, কালো ছাইয়ে আসবাব থেকে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রায় সময়ই জানলা, দরজা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
ইকড়ার সোমনাথ বাউরি, আকু ঘোষ, রাজেশ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলপুরের বাসিন্দা অজয় গোপ, লুইচাঁদ সূত্রধর, সুকুমার খাঁ’দের দাবি, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরে থেকেই এলাকাবাসী স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পেরেছেন। আবার শ্বাসকষ্টের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ৪০ দিনে সবুজ রং ফিরে পাওয়া গাছের পাতাগুলি আবার কালো হয়ে গিয়েছে। জলাশয়ের জলে কালো আস্তরণ পড়েছে।’’
তাঁদের অভিযোগ, দূষণের জেরে বছর পাঁচেক এলাকায় চাষাবাদ লাটে উঠেছে। জলাশয়ে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, ধোঁয়া মিশ্রিত কয়লা, মাটির গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা করার মতো ঘটনা ঘটে। তা থেকে চোখের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া, ওই গুঁড়ো মিশ্রিত জল ব্যবহার করলে চর্ম ও পেটের রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভবনা প্রবল। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।
সিপিএম বিধায়ক রানিগঞ্জে রুনু দত্ত, জামুড়িয়ার জাহানারা খানদের অভিযোগ, বহু বার এর প্রতিকারের দাবিতে বিধানসভাতেও সরব হয়েছেন। তাতে লাভ হয়নি। তৃণমূল বিধায়ক (আসানসোল দক্ষিণ) তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দূষণের জেরে এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আবেদন জানাব।’’
তবে ‘জামুড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ’-এর সম্পাদক অজয় খেতান ও ‘রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স’-এর সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়ার দাবি, ‘‘লকডাউনের পরে, দূষণ ছড়ানোর অভিযোগের ভিত্তি নেই। কারণ, কোনও কারখানাতেই অর্ধেকের বেশি কাজ হচ্ছে না। পুরোটাই বিধি মেনেই হচ্ছে।’’
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল মহকুমা শাখার আধিকারিক স্বরূপ মণ্ডল জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy